কচুয়ার সাচারে ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব
সুজন পোদ্দার ॥
সনাতন ধর্মবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষে কচুয়ার সাচারে উৎসবমূখর পরিবেশে ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়েছে। আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে এই রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর সাচার জগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক সংঘের আয়োজনে ১৫৭ তম জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা শুরু হয়েছে। রবিবার বিকেলে সাচার জগন্নাথ ধাম মন্দির প্রাঙ্গন থেকে জগন্নাথ,বলরাম ও শুভদ্রার বিগ্রহ সহ রথ টেনে সাচার পূর্ব বাজারে নিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে এ রথ উৎসব শুরু হয়। ভক্তবৃন্দের ধ্বনি ও আনন্দ উৎসবে পুরো সাচার এলাকা মুখরিত হয়।এ সময় চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) রাশেদুল হক চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এহসান মুরাদ,এএসপি কচুয়া সার্কেল রিজওয়ান সাইদ জিকু , কচুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মিজানুর রহমান,চাঁদপুর ডিবি পুলিশ পরিদর্শক মো: মহিউদ্দিন,রথ উদযাপন কমিটির সভাপতি শুকদেব গোস্বামী ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ গোপ, জগন্নাধ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি বটু কৃষ্ণ বসু, সিনিয়র সহ-সভাপতি নিখিল দাস ও সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব সাহা, উপজেলা হিন্দু বৌদ্দ খ্রীষ্টন ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রানধন দেব,সাধারন সম্পাদক প্রিয়তুষ পোদ্দার, কচুয়াসহ দেশ বিদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশ সহ¯্রাধিক ভক্তবৃন্দ রথ উৎসবে যোগদান করেন।
রবিবার ভোর সাড়ে ৪টায় মঙ্গলআরতি, সকাল সাড়ে ৭টায় ও গুরু পূজা, সকাল ৮টায় চৈতন্যচরিতামৃত পাঠ, সকাল ৯টায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, দুপুর ১২টায় ভোগা আরতি, দুপুর ২টায় ভজন কীর্তন ও প্রসাদ বিতরণ, বিকাল ৫টায় জগন্নাথ মন্দিরের পশ্চিম প্রাঙ্গন থেকে রথ টেনে পূর্ব বাজারে আনা হয়। তাছাড়া রথযাত্রা উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়। এ মেলায় কুটির শিল্পের বিভিন্ন আসবাবপত্র, খেলনা, প্রসাধনি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর স্টল স্থান পায়।
ছবি: সাচার রথ উৎসবে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) রাশেদুল হক চৌধুরীকে ফুল দিয়ে বরণ করছেন রথ উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ।
জগন্নাধ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি বটু কৃষ্ণ বসু, জানান, প্রথম রথযাত্রায় এই বিশাল ভীড়কে শৃঙ্খলার মাঝে রাখতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশিপাশি আমাদের মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেছে।
রথ উদযাপন কমিটির সভাপতি শুকদেব গোস্বামী জানান, জমিদার গঙ্গা গোবিন্দ সেনের হাত ধরেই এই জগন্নাথ ধামের রথ যাত্রা উৎসব পালন করে আসছি। আগামী ১৪ জুলাই রবিবার উল্টো রথযাত্রা উৎসবের মধ্য দিয়েই এ রথযাত্রার সমাপ্তি ঘটবে।
কথিত আছে যে, প্রায় দেড়শত বছর পূর্বে সাচার বাবু বাড়ির জমিদার গঙ্গা গোবিন্দ সেন ভারতে হিন্দু তীর্থস্থান পুরীতে জগন্নাথ দর্শনে গেলে, জগন্নাথ গঙ্গা গোবিন্দকে দর্শন দেননি। বরং পুরীর দরজা-জানালাগুলো আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। দর্শন লাভে ব্যর্থ হয়ে পরম ধার্মিক গঙ্গা গোবিন্দ সেন দর্শন লাভের আশায় পুরীর বাহিরে আমরন-অনশন শুরু করে দেয়। অনশনের কয়েকদিন অতিবাহিত হলে গঙ্গা গোবিন্দ সেন স্বপ্নাদৃষ্ট হন যে, এ স্থানে জগন্নাথ গঙ্গা গোবিন্দ সেনকে দর্শন না দিয়ে তার সাচারের বাড়ির সম্মুখের দীঘিতে ভাসমান নিম কাঠ আকৃতিতে দর্শন দিবেন। স্বপ্নাদৃষ্ট হয়ে গঙ্গা গোবিন্দ সেন নিজ বাড়ি ফিরে আসেন এবং ক’দিন পর উক্ত দীঘিতে স্নান করার সময় আকস্মিক ভাবে ভাসমান নিম কাঠ আকৃতিতে জগন্নাথ দর্শন লাভ করেন।
Leave a Reply