১০ জুন বুধবার রাত আড়াইটা থেকে ১১জুন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা এই ১৭ঘণ্টার মধ্যে একজন তরুণ মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ও একজন মুক্তিযোদ্ধাসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে। এ সাতজনের মধ্যে তিনজন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে, একজন ঢাকা সিএমএইচে, দুইজন ঢাকা নেয়ার পথে এবং আরেকজন বাড়িতেই মারা যান। বিভিন্নভাবে জানা গেছে, এ সাতজনই অনেকদিন যাবত বাড়িতে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সময়ক্ষেপণ করেন। সব শেষে হাসপাতালে আনার পর ৪ থেকে ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে মারা যায়। মারা যাওয়া সাতজনের মধ্যে তিনজন হচ্ছেন বাবুরহাট এলাকার চাচাতো-জেঠাতো দুই ভাই এবং প্রতিবেশি, একজন হাজীগঞ্জের বলাখাল গ্রামের, একজন ফরিদগঞ্জ নয়ারহাট এলাকার, একজন মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী উত্তর ইউনিয়নের প্রধানীয়া বাড়ির এবং আরেকজন একই উপজেলার খাদেরগাঁও ইউনিয়নের বেলুতী গ্রামের। এদের প্রত্যেককে নিজ নিজ এলাকায় এনে স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী বিশেষ ব্যবস্থায় দাফন করা হয় এবং প্রত্যেকের স্যাম্পল নেয়া হয়।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিষয়ে ফোকালপার্সন ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল জানান, হাজীগঞ্জের বলাখাল গ্রামের নূরে আলম (৫০) বুধবার রাত ১০ টার দিকে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাকে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। রাত আড়াইটার দিকে তিনি মারা যান।
ডাঃ রুবেল জানান, বুধবার বিকেলে বাবুরহাট এলাকার হাবিব খান (৭০) বেলভিউ হাসপাতালে এসে তাকে দেখান। তখন তার মধ্যে করোনা সন্দেহ হলে তিনি তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যার দিকে হাবিব খান সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। গতকাল দুপুর দুইটার দিকে তিনি মারা যান। এদিকে ফরিদগঞ্জ নয়ারহাট এলাকার তাজুল ইসলাম (৩২) নামে এক তরুণ মেরিন ইঞ্জিনিয়ার গতকাল দুপুর দুইটার দিকে সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হন করোনার উপসর্গ নিয়ে। ভর্তি হওয়ার আধা ঘণ্টার মাথায় আড়াইটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
এদিকে বাবুরহাট এলাকার মৃত হাবিব খানের চাচাতো ভাই আনোয়ার খানকে (৫৫) গতকাল বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে ঢাকা নেয়ার পথে মারা যান। জানা গেছে, তিনি প্রায় দশদিন যাবৎ বাড়িতেই জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সময়ক্ষেপণ করেন। পরে গতকাল সরাসরি ঢাকা নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
একই এলাকার পার্শ্ববর্তী পাটওয়ারী বাড়ির (বাবুরহাট কলেজ মাঠ সংলগ্ন) মোফাজ্জল হোসেন পাটওয়ারীকে (৭৫) গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঢাকা নেয়ার পথে মারা যান। তিনিও গত কয়েকদিন যাবৎ জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বাড়িতেই ছিলেন।
মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী উত্তর ইউনিয়নের প্রধানীয়া বাড়ির মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন (৬৭) গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর চারটার দিকে ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁকে গত ৪ জুন বৃহস্পতিবার ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার মাঝেও করোনার উপসর্গ ছিলো। গতকাল ভোরে তিনি মারা যান। তাঁকে গ্রামের বাড়িতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
মতলব উপজেলার খাদেরগাঁও ইউনিয়নের বেলুতী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা অহিদুজ্জামান খন্দকার (৭০) নিজ বাড়িতেই করোনার উপসর্গ জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যায়। এদের প্রত্যেককে স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী বিশেষ ব্যবস্থায় দাফন করা হয় এবং করোনা শনাক্তের জন্যে সবার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
Leave a Reply