পানিশূণ্য হয়ে পরা তিস্তা নদীতে হঠাৎ পানিপ্রবাহ বেড়েছে। ফলে পানির অভাবে অকার্যকর হতে বসা দেশের বৃহৎ তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্প সচল হয়ে উঠেছে। অপ্রত্যাশিতভাবে পানি পেয়ে সেচ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন প্রকল্প এলাকার কৃষকেরা। দীর্ঘদিন পর পানি পেয়ে উৎফুল্ল এলাকার কৃষক।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ি মঙ্গলবার ব্যারেজ পয়েন্টে পৌঁছেছে তিন হাজার ছয় কিউসেক পানি। প্রত্যাশা অনুযায়ি পানি পাওয়ায় দুপুরে নীলফামারীর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দিনাজপুর সেচখালের সুবিধাভোগী কৃষকদের খেতখামারে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা গেছে। তবে তিস্তার এই পানি প্রবাহ সবসময় চান।
নীলফামারি জেলা সদরের বিশমুড়ি গ্রামের কৃষক রইসুল আলম বলেন, “হামরালা আইজ খুব খুশি। রাইতোতো ভাবো নাই সাকালে উঠি এত পানি পামো। সাত দিন আগত অল্প পানি পাইছিনো। পানি কম দেখি সেলা শ্যালো দিয়া সেচ দিছি। আইজ পানির অভাব নাই। এই রকম পানি পাইলে হামার আবাদ করিবার কোনো অসুবিধা হইবে না। পানি পাইলেই হামরা খুশি।”
একই গ্রামের আরেক কৃষক আফজাল আহমেদ বলেন, “হামার গ্রামের অনেক জমির ধান পানির অভাবে নষ্ট হয়া গেইছে, এলা পানি দিছে। এইরকম পানি পাইলে আর অসুবিধা হইবে না।”
সদরের ইটাখোলা গ্রামের আবু বক্কর জানালেন, গত ২০ দিনের ব্যবধানে তাঁর দুই বিঘা জমির পাটবীজ দুবার নষ্ট হয়ে গেছে। দুই বিঘা জমির বোরো ধানগাছ পানির অভাবে নষ্ট হয়েছে।
এলাকাবাসী কৃষক ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৪ সালে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তার পানি নেমে আসে প্রায় শূন্যের কোঠায়। পানির অভাবে অনেক আবাদি জমি নষ্ট হয়। তিস্তায় দেখা দেয় স্মরণকালের ভয়াবহ পানিশূন্যতা।
পানির অভাবে তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের আওতায় থাকা প্রধান সেচখাল হয়ে দিনাজপুর, রংপুর ও বগুড়া খাল প্রায় শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। কুষিকাজ ব্যাপকভাবে ব্যহত হয়ে যায়।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে তিস্তার পানি কমতে কমতে মাত্র ৫০০ থেকে ৫৫০ কিউসেকে দাঁড়ায়। অথচ এ সময় এ নদীতে স্বাভাবিকভাবে গড়ে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কিউসেক পানি থাকা প্রয়োজন। গত রোববার ৬৮৮ কিউসেক এবং গতকাল সোমবার পানিপ্রবাহ ছিল ৮৩০ কিউসেক। আজ তিন হাজার ছয় কিউসেক যা সত্যি আমাদের জন্য ভালো।
পানি উন্নয়ন বোর্ড এ প্রকল্পের আওতায় ৬০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করে ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে পালাক্রমে সেচ প্রদান করে। এটি লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকেরও কম। এতে ওই প্রকল্প এলাকার তিন জেলার ১২ উপজেলার বোরো চাষিরা বিপাকে পড়েন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, “হয়তো ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের গেট খুলে দেওয়ায় পানি বেড়েছে। যাই হোক পানির এই প্রবাহ কৃষকের জন্য আনন্দের।”
Leave a Reply