সনাতন ধর্মবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষে কচুয়ার সাচারে উৎসবমূখর পরিবেশে ভারতীয় উপমহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে লাখো ভক্তবৃন্দ। আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে ২০ জুন মঙ্গলবার বিকেল ১৫৬ তম জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বরাস্ট্রমন্ত্রী ড.মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপি। মঙ্গলবার রথ টানার মধ্য দিয়ে এ উৎসব শুরু হয়। রথযাত্রা উৎসবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও ভারত থেকে লাখো লাখো হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তবৃন্দ কচুয়ার সাচার রথযাত্রা উৎসবে শামিল হয়।
সপ্তাহব্যাপী চলবে এ উৎসব। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টায় মঙ্গলআরতি, সকাল সাড়ে ৭টায় ও গুরু পূজা, সকাল ৮টায় চৈতন্যচরিতামৃত পাঠ, সকাল ৯টায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, দুপুর ১২টায় ভোগা আরতি, দুপুর ২টায় ভজন কীর্তন ও প্রসাদ বিতরণ, বিকাল ৫টায় জগন্নাথ মন্দিরের পশ্চিম প্রাঙ্গন থেকে রথ টেনে পূর্ব বাজারে আনা হয়। তাছাড়া রথযাত্রা উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়। এ মেলায় কুটির শিল্পের বিভিন্ন আসবাবপত্র, খেলনা, প্রসাধনি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর প্রায় ৫ শত স্টল স্থান পায়।
রথযাত্রা উৎসবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হাসান,উপজেলা সহকারী কমশিনার ভ’মি ইবনে আল জায়েদ হোসেন,কচুয়া প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক সুজন পোদ্দার,হিন্দু বৌদ্ধ খিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রিয়তোষ পোদ্দার, উদযাপন কমিটির সদস্য সাংবাদিক মানিক ভৌমিক,সহ উপজেলা প্রশাসন,জনপ্রতিনিধি, রথ উদযাপন কমিটির সদস্যগন ও লাখো ভক্তবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জগন্নাধ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি বটু কৃষ্ণ বসু ও সিনিয়র সহ-সভাপতি নিখিল দাস জানান, জগন্নাথ দেবের ভক্তবৃন্দের সহযোগীতায় গত বছর পুনঃনির্মিত ভবন নতুন রূপে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আজ ২০ জুন মঙ্গলবার প্রথম রথযাত্রায় লক্ষাধিক ভক্তদের সমাগম ঘটেছে। তাই এই বিশাল ভক্তবৃন্দকে শৃঙ্খলার মাঝে রাখতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশিপাশি আমাদের মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেছে।
রথ উদযাপন কমিটির সভাপতি শুকদেব গোস্বামী ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ গোপ জানান, জমিদার গঙ্গা গোবিন্দ সেনের হাত ধরেই আমরা এই জগন্নাথ ধামের রথ যাত্রা উৎসব পালন করে আসছি। আজকে প্রথম রথে লক্ষাধিক ভক্তবৃন্দের সমাগমে জগন্নাথ ধাম মন্দির প্রাঙ্গনে উৎসবের আমেজ বিরাজ করেছে। আগামী ২৭ জুন মঙ্গলবার উল্টো রথযাত্রা উৎসবের মধ্য দিয়েই এ রথযাত্রার সমাপ্তি ঘটবে।
কথিত আছে যে, প্রায় দেড়শত বছর পূর্বে সাচার বাবু বাড়ির জমিদার গঙ্গা গোবিন্দ সেন ভারতে হিন্দু তীর্থস্থান পুরীতে জগন্নাথ দর্শনে গেলে, জগন্নাথ গঙ্গা গোবিন্দকে দর্শন দেননি। বরং পুরীর দরজা-জানালাগুলো আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। দর্শন লাভে ব্যর্থ হয়ে পরম ধার্মিক গঙ্গা গোবিন্দ সেন দর্শন লাভের আশায় পুরীর বাহিরে আমরন-অনশন শুরু করে দেয়। অনশনের কয়েকদিন অতিবাহিত হলে গঙ্গা গোবিন্দ সেন স্বপ্নাদৃষ্ট হন যে, এ স্থানে জগন্নাথ গঙ্গা গোবিন্দ সেনকে দর্শন না দিয়ে তার সাচারের বাড়ির সম্মুখের দীঘিতে ভাসমান নিম কাঠ আকৃতিতে দর্শন দিবেন। স্বপ্নাদৃষ্ট হয়ে গঙ্গা গোবিন্দ সেন নিজ বাড়ি ফিরে আসেন এবং ক’দিন পর উক্ত দীঘিতে স্নান করার সময় আকস্মিক ভাবে ভাসমান নিম কাঠ আকৃতিতে জগন্নাথ দর্শন লাভ করেন।
ছবি ঃ সাচারে জগন্নাথের রথযাত্রায় লাখো ভক্তবৃন্দের সমাগমে রথ টানা হচ্ছে।
Leave a Reply