কচুয়ায় সুমনা আক্তার শাহনাজ (১৪) নামের নবম শ্রেণির স্কুল শিক্ষার্থী বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। স্থানীয়রা জানান, ২৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকালে করইশ মজু মিয়া প্রধানীয়ার বাড়ি সংলগ্ন সড়কে স্কুল শিক্ষার্থী সুমনা ছটপট শুরু করলে লোকজন দেখতে পেয়ে তাকে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে।
সুমনার বাবা সুমন জানান, প্রতিদিনের মত সকালে স্কুলে যাওয়ার কথা বলে আমার মেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। তারপর বাড়ির লোকজন মজু প্রধানিয়ার বাড়ির সামনের রাস্তায় সুমনাকে ছটপট করতে দেখে আমাকে সংবাদ দেয়। আমি দ্রুত সুমনাকে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। কিন্তু আমার মেয়েকে কুমিল্লা নেওয়ার আগেই সে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে।
কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার আসাদুজ্জামান সূত্রে জানা যায়, সুমনা নামের স্কুল শিক্ষার্থী ইদুরের ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে আসে পরিবারের লোকজন। এসময় চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অবস্থার অবনতি দেখলে তাকে কুমিল্লায় রেফার করে। কুমিল্লায় নেওয়ার পূর্বেই সে মৃত্যুবরণ করে।
স্কুল শিক্ষার্থী সুমনার বিষপানে আত্মহত্যা বিষয়টি নিয়ে তার বাবা সুমন ৫জনকে বিবাদী করে কচুয়া থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলা করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, কড়ইয়া গ্রামের শহিদ মুন্সির ছেলে ফুয়াদ হোসেন রিফাতের সাথে আমার মেয়ের ৩বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। প্রেমের সম্পর্কের সময় ফুয়াদ আমার মেয়ে অগোচরে তার বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ধারন করে। এবং পরবর্তীতে সে আমার মেয়েকে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করে। আমার মেয়ে বিষয়টি আমাকে ও আমার স্ত্রী শারমীনকে অবহিত করলে আমরা স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অবহিত করে স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা করি। বিবাদীরা সমাধানে না আসিয়া আমার মেয়েকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং তাকে হুমকি প্রদান করে যে আমার মেয়ে সুমনা যদি ফুয়াদের জীবন থেকে সড়ে না যায় তাহলে তারা আমার মেয়ের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করে ভাইরাল করবে এবং সম্মানহানী করবে। বিবাদীরা পরস্পর যোগসাজস করে আমার মেয়ে সুমনা আক্তারকে বিভিন্ন ধরনের অপবাদ দিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়। আমি আমার মেয়ে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুরের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহতের পরিবারের কাছ থেকে এজাহার পেয়েছি, মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে নিহত সুমনা আক্তারের মৃত্যুতে তার অধ্যয়নরত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কচুয়া ক্যামব্রিয়ান স্কুলের শিক্ষার্থীরা কচুয়া বিশ^রোড এলাকায় আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের শাস্তির দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে। শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের সহপাঠী সুমনাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা করা হয়েছে। তার ভিডিও এবং ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দিবে বলে হুমকি দেয় এবং বিবাহ করতে অস্বীকৃতি জানায় বলেই সুমনা বিষপান করেছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি, আমরা ফুয়াদ মুন্সিসহ অনান্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।
ছবি: কচুয়া ক্যামব্রিয়ান স্কুলের শিক্ষার্থীরা কচুয়া বিশ^রোড এলাকায় সুমনার আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের শাস্তির দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করছে।
Leave a Reply