তবে দিনভর বিক্ষোভের পর এনবিআরের ঘোষণায় আশ্বস্ত হয়ে আন্দোলন থেকে ফিরে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে।
বেসরকারি উচ্চ শিক্ষায় টিউশন ফিতে আরোপিত সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধে রাজধানী অচল হয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জানায়, ওই কর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হবে না, নেওয়া হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
এনবিআরের ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করে ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’র মুখপাত্র ফারুক আহমাদ আরিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আন্দোলন করছি, শিক্ষায় ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে। সুতরাং কে পরিশোধ করছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। শিক্ষায় কোনো ভ্যাট থাকতে পারবে না।”
চলতি অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি উচ্চ শিক্ষায় এই ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব উঠার পর থেকে তাতে আপত্তি জানিয়ে আসছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা। তারা বলছে, ভ্যাট আরোপের মাধ্যমে শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতিফলন ঘটেছে।
নানা কর্মসূচি পালনের পর বুধবার রাজধানীর বাড্ডায় ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে এলে তাদের লাঠিপেটা ও রবার বুলেট ছুড়ে উঠিয়ে দেয় পুলিশ। এর পরদিন একযোগে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়কে নামে।
নানা কর্মসূচি পালনের পর বুধবার রাজধানীর বাড্ডায় ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে এলে তাদের লাঠিপেটা ও রবার বুলেট ছুড়ে উঠিয়ে দেয় পুলিশ। এর পরদিন একযোগে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়কে নামে।
আন্দোলনকারীদের নেতা স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র ফারুক বলেন, ভ্যাট প্রত্যাহার ছাড়াও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলকারীদের বিচার করতে হবে। দায়ী চিহ্নিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করতে হবে। আহতদের রাষ্ট্রের টাকায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
“আমাদের এই দাবি মেনে নেওয়া না হলে আন্দোলন চলবে। আজ ঢাকার যে যে পয়েন্টে বিক্ষোভ হয়েছে, আগামীকাল ১০টা থেকে সেই সব পয়েন্টে আবারও আমরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করব।”
ভ্যাট ইস্যুতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এই আন্দোলনে ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ নামে ব্যানার গড়ে উঠেছে। তবে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
দুপুরে এনবিআরের ঘোষণার পরও এই ব্যানারের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা কিছু শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে ধানমণ্ডি এলাকায় বিক্ষোভ চলতে থাকে।
তবে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কের মোড়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অবরোধ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আরেকটি অংশ তার বিরোধিতা করে।
দুই পক্ষের বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে মারামারি বেঁধে যায় বলে জানিয়েছেন সেখানে থাকা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক লিটন হায়দার।
এই সময় পুলিশ থাকলেও তাদের কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
আন্দোলনরতদের মধ্যে মতবিরোধ ও মারামারি শুরুর পর আটকে থাকা কিছু গাড়ি মিরপুরের দিকে চলতে শুরু করে।
তবে ৫ মিনিটের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের একাংশ আবার এসে সড়কে অবস্থান নিলে গাড়ি চলাচল পুনরায় বন্ধ হয়ে যায়।
এর আধা ঘণ্টা পর আরেক দল এসে ধাওয়া করে তাদের তাড়িয়ে দেয়। এই দলটি সরকার সমর্থক ছাত্রলীগের কর্মী বলে আন্দোলকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।
ধাওয়া খেয়ে ওই ছাত্ররা দক্ষিণে কয়েকশ গজ দূরে শুক্রবাদে গিয়ে সড়ক অবরোধ করলে সেখানে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে তুলে দেয়।
এদিকে এনবিআরের ব্যাখ্যার পর সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের জানায়, তারাই ভ্যাট পরিশোধ করবে। যে সব শিক্ষার্থীরা ভ্যাট বাবদ অর্থ পরিশোধ করেছে, তাদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
Leave a Reply