মো: আলমগীর তালুকদার ॥
চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার উজানী গ্রামে অবস্থিত ফৌজদার বখতিয়ার খাঁ শাহী মসজিদটি কালের সাক্ষ্য বহন করেছে। ১১১৭ হিজরীতে নির্মিত হয় এ মসজিদ। মোগল বাদশা বাহাদুর শাহের আমলে ফৌজদার বখতার খাঁ’র সদর কার্যালয় ছিল উজানী গ্রামে, তথাকথিত এক কালের উজানী নগরে। বখতার খাঁ’র শাসনামলে পরবর্তীতে সম্ভবত কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে উজানী গ্রাম জনশূন্য ও অনাবাদী হয়ে হয়ে উঠে। ফলে উজানী গ্রামের অধিকাংশ স্থানই বন জঙ্গলে আচ্ছাদিত হয়। প্রায় শত বছর পূর্বে ওলিয়ে কামেল ক্বারী হযরত ইব্রাহীম (রহ) উজানী গ্রামে স্থায়ী বসবাস স্থাপনের লক্ষ্যে(স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে) জংলা খরিদ করে তা পরিষ্কারের কাজ করা কালীন দৃষ্টিগোচর হয় প্রাচীন কালের মুসলিম সভ্যতার নীরব সাক্ষী একটি মসজিদ। মসজিদটি একটি বড় বট বৃক্ষের শিকড়ে আচ্ছাদিত ছিল এবং মসজিদের ভেতরে বাস করত বাঘ। ফৌজদার বখতার খাঁয়ের কোন বংশধর আজ আর এ উজানীতে নেই। ফৌজদার বখতার খাঁ ছিল আবুল হোসেন খাঁর পুত্র এবং ইলিয়াছ খাঁর পৌত্র। মসজিদের ভেতরের দেয়ালে স্থাপিত পাথরে খোদাই করে যা লেখা রয়েছে তা হচ্ছে – “ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, লা ইলাহা ইল্লালল্লাহু মোহাম্মদুর রাছুলুল্লাহ, মসজিদে মেহরাবে ছেরাগে বসর আবু বকরো উমরো ওসমানো হায়দার। চৌবায়ে বাংলা সাকিল ফরগনায়ে দোল্লাই দরজাহানে আমলে বাদশা গাজী বাহাদুর শাহ, ছেনা ১১১৭ হিজরী, খাদেম শেখ বখতার খাঁ এবনে ইলিয়াছ খাঁ”। তিন শতাধিক বছর পূর্বে নির্মিত এ মসজিদের দক্ষিন সংলগ্নে দুটি দিঘীর অস্তিত্ব আছে। দীঘী ২টির মাঝ খান দিয়ে আইলের মত ছিল। বর্তমানে মধ্য খানের এ আইলটির ১০/১২ফুট চওড়া করে বেধে রাস্তা নির্মান করা হয়। এ মসজিদটি বখতার খাঁ’র কার্যালয় হিসাবেও ব্যবহার করা হয় বলে ধারনা করা হচ্ছে।
উজানীর ধনাঢ্য ব্যক্তি হাজী ইসমাইল হোসেন (পপুলার পলিশ লিমিটেড এর মালিক) তাঁর একক সাহায্যে বহু অর্থ ব্যয়ে আধুনিক কারুকার্যে তিনতলা মসজিদের পরিকল্পনা নিয়ে ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় তলার কাজ সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে এর দৈর্ঘ্য প্রস্থ ১২৬ ৮১ ফুট। বথতারখা মসজিদের পাশে রয়েছে ঐতিহাসিক মুসলিম সভ্যতার সাক্ষ্য বহনকারী দ্বীনী শিক্ষা প্রজ্জ্বলিত করে তোলার লক্ষ্যে প্রখ্যাত ওলিয়ে কামেল ক্বারী ইব্রাহীম(র:) স্বনামে প্রতিষ্ঠিত জামিয়া ইসলামিয়া ইব্রাহিমীয়া উজানী মাদ্রাসা।
Leave a Reply