প্রতিনিয়ত শুধু ভোগ্য পণ্যের দাম বর্ষার পানির ন্যায় হুহু করে বেড়েই চলছে। একশ্রেণীর অসাধু সিন্ডিকেট কারবারীদের কারনে দিন দিন অর্থনীতির চাকা চরম হৃস পাচ্ছে। কৃষকের উৎপাদিত পন্য চাল, ডাল, গম বিশেষ করে শাক-সবজির বাজারে আগুন লেগে থাকলেও কৃষক তার ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেনা। অথচ সাধারন খেটে খাওয়া কর্মহীন মানুষগুলোকে নিতান্তই চড়া মূল্যে ওইসব ভোগ্য পন্য ক্রয় করতে হচ্ছে। কৃষকের উৎপাদিত উদ্যান ফসল পেয়াজ, রসুন, মসলার দাম বাড়ীয়ে মানুষের নাভিঃশ^াস তুলেছে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পন্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে।
বছর জুড়েই চাল, ডাল, গম, আটা ও মাছ-মাংস থেকে শুরু করে শীতকালিন সবজির গায়েও যেন আগুন লেগেই আছে। এসব নিয়ন্ত্রনে ভোক্তা অধিকার আইন থাকলেও কার্যত তা পরিপালন চোখে পড়ছে না। বিশেষ করে গ্রামীণ সমাজে চোখে পড়ারমত কোন কর্মকান্ড দেখা যায় নি। সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপের কথা বলা হলেও অসাধু সিন্ডিকেট কারবারিদের কারনে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একারনে বছর জুড়ে বাজারে আগুন লেগেই আছে।
বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে সপ্তাহের ব্যবধানে পেয়াজের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৭ টাকা। যেখানে ২০ টাকা থেকে শুরু হয়ে পেয়াজের কেজি পৌঁছে গেছে ৪৫ টাকায়। এছাড়া সরকারি মূল্য অনুযায়ী ঝিরা প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, গোল মরিচ ৬০০ টাকা, পেয়াজ ৪৫ টাকা, এলাচি ২০০০ টাকা, দারচিনি ৪০০ টাকা, রসুন ৪০ টাকা, সয়াবিন তৈল ১৭০ টাকা, সরিষার তৈল ২১০ টাকা, সাদা মটর ডাল ৫০ টাকা, মুগ ডাল ১২০ টাকা, ভেসন ৫০ টাকা, গুড়া মরিচ ২৮০ টাকা, হলুদ ১৬০ টাকা ও লবনের মূল্য কেজি প্রতি ৩০ টাকা দেখানো হয়েছে। সরকারি মূল্য তালিকা অনুযায়ী পাইকারি বিক্রেতারা মূল্য তালিকা দোকানে সাটিয়ে রাখলেও কার্যত এর চিত্র ভিন্ন। সরকারি-বেসরকারি চাকুরিজিবী থেকে শুরু করে দৈনন্দিন খেটে খাওয়া মানুষগুলো এ চড়া মূল্যের শিকার হচ্ছে। একদিকে উৎপাদন খাতের লোকজনরা স্বল্প মূল্যের পন্য বিক্রি করে অর্থের গচ্ছা গুনছে। অন্যদিকে ভোক্তা খাতের লোকজনরা অতিরিক্ত মূল্যে দিয়ে মুনাফা লোভীদের ধনী করে তুলছে। ফলে শস্য খাতে উৎপাদিত অর্থ চলে যাচ্ছে এক শ্রেণীর মুনাফা লোভী লোকজনের হাতে।
সরজমিনে স্থানিয় কচুয়া বাজার গুরে দেখা গেছে- কৃষকের উৎপাদিত নাজির চাউল, ঝিরা চাউল, ফারিজা চাউল, চিকন স্বর্না চাউল, লতা চাউল ও বালাম চাউল সংকট রয়েছে। মিনিকেট চাল কেজি প্রতি ৬০ টাকা, ২৮ চাউল ৪৮ টাকা, ফাইজাম চাউল ৪৪ টাকা, গুটি স্বর্না চাউল ৪১ টাকা, চিনি গুড়া চাউল ১০০ টাকা, বাসমতি চাউল কেজি প্রতি ৭৩ টাকা দেখানো হয়েছে। অপরদিকে চিনি কেজি প্রতি ৮০ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা, খেসারি ৮০ টাকা, মশুর ডাল ১৩০ টাকা, এংকর ডাল প্রতি কেজি ৫০ টাকা, আটা ৩২ টাকা, ময়দা ৫০ টাকা দেখানো হলেও বাস্তবে এর চিত্র ভিন্ন। খুচরা পর্যায়ে ক্রয় করতে গেলে এসব পন্যের অতিরিক্ত ৩-৪ % গচ্ছা গুনতে হয়।
কাঁচা সবজি, ফুল কপি, বাধা কপি, সিম, মুলা, গাজর, সিসিঙ্গা, শসা, ডাটা ও কাঁচ কলার দাম বেড়েছে বহুগুনে। ১ কেজি পুঁই শাক যেখানে কিনতে হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায় সেখানে বাজারে যে ত্রাহী অবস্থা বিরাজ করছে তা বলার অপেক্ষে রাখেনা।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ‘কেনায় বেশী পড়ছে’ অজুহাতে তা দিগুন দরে বিক্রি করছে। যা সত্যি আশ্চার্য্যরে বিষয়। এসব মনিটরিং এ স্থানীয় প্রশাসন থেকে কোন রুপ কর্মকান্ড পরীলক্ষিত হচ্ছে না। অন্য দিকে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত পন্যেও ন্যায্য মুল্য পাচ্ছেনা কৃষকরা।
‘কেনা ও বেচার’ এ দ্বৈত নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে স্থানীয় বাজার ব্যবসায়ী সমিতি থেকে শুরু করে পৌর প্রশাসন উপজেলা প্রশাসনকেও এগিয়ে আসতে হবে। নইলে দিনের পর দিন অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা উৎপাদিত পন্যের সংকট দেখিয়ে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতেই থাকবে। আর ভূক্তভোগী সাধারন ক্রেতা-বিক্রেতারা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হবে। ফলে সরকারের কৃষি বান্ধব প্রতিশ্রুতি যেমনি করে ভেস্তে যাবে তেমনি আর্থ সামাজিক উন্নতি হ্রাস পাবে।
এমনিকরে দিনের পর দিন চলতে থাকলে ন্যায্য মূল্য বঞ্চিত সাধারণ কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়বে। ফলে অনাবাদি জমির পরিমান বেড়ে যাবে। এতে করে খাদ্য শস্যা উৎপাদন ব্যহত হবে। সমাজের নি¤œ বৃত্ত, নি¤œ মধ্যে বৃত্ত ও মধ্য বৃত্ত পরিবারে উৎপাদিত পন্যের ঘাটতির কারনে পর্যাপ্ত সরবরাহের সংকট পড়বে। ফলে রঙ্গীণ শাক-সবজির অভাবে পুষ্টি হিনতায় ভুগবে সাধারন পরিবারগুলো। এর ফলে সমাজে ভর করতে পারে নানাবিধ অসুখও। যা সাধারন জনপড়ে একদিন ভয়াবহ চিত্র হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে একযোগে কাজ করতে হবে। সাথে ব্যবসায়ীদেরকেও নৈতিক অবক্ষয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নইলে অদূর ভবিষ্যতে এর জন্য সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় চরম মূল্যে দিতে হতে পারে। যা একটি গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় সুন্দর সমাজ গঠনে কখনও কাম্য হতে পারে না।
মোঃ সালাউদ্দিন সোহাগ
ব্যাংকার ও সাবেক সাধারন সম্পাদক
কচুয়া প্রেস ক্লাব, চাঁদপুর।
Leave a Reply