এশিয়া উপমহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা ৭ জুলাই
কচুয়ায় ঐতিহ্যবাহী সাচার রথযাত্রা উৎসবকে ঘিরে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন
সুজন পোদ্দার ॥
জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেছে রথযাত্রার প্রস্তুতি। এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব সাচার জগন্নাথ ধামের রথযাত্রা। পঞ্জিকানুযায়ী আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী ৭ জুলাইরবিার প্রথম রথযাত্রা শুরু। এ বছর জগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক সংঘের আয়োজনে ১৫৭ তম জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রাচীনতম এ রথযাত্রা উৎসবকে ঘিরে মেতে ওঠেন সনাতন ধম্বালম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের লক্ষাধিক ভক্তবৃন্দ।
রথযাত্রা উৎসবে শামিল হবেন কচুয়াসহ দেশ বিদেশের হাজার হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তবৃন্দ। সাচার জগন্নাথ ধামের শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। ১০ দিন ধরে চলবে এ উৎসব। এবারে মহাসমারোহে লক্ষাধিক ভক্ত সমাবেশ হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মন্দির কমিটির কর্তৃপক্ষ।
এ রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষ্যে সাচার জগন্নাথ ধাম মন্দির কমিটি ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহন করেছেন। আগামী ৭ জুলাই রোববার ভোর সাড়ে ৪টায় মঙ্গলআরতি, সকাল সাড়ে ৭টায় ও গুরু পূজা, সকাল ৮টায় চৈতন্যচরিতামৃত পাঠ, সকাল ৯টায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, দুপুর ১২টায় ভোগা আরতি, দুপুর ২টায় ভজন কীর্তন ও প্রসাদ বিতরণ, বিকাল ৫টায় জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গন থেকে রথ টেনে পূর্ব বাজারে আনা হবে। সন্ধ্যায় ৭টায় আরতি কীর্তন অনুষ্ঠিত হবে।
জগন্নাধ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি বটু কৃষ্ণ বসু ও সিনিয়র সহ-সভাপতি নিখিল দাস জানান, এই বৎসর রথ যাত্রা উৎসবকে ঘিরে দেশ বিদেশের জগন্নাথ দেবের লক্ষাধিক ভক্তবৃন্দের সমাগম ঘটবে বলে আশা করছি। তাই এই বিশাল ভীড়কে শৃঙ্খলার মাঝে রাখতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশিপাশি আমাদের মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া আগত ভক্তবৃন্দের জন্য পানি এবং প্রসাদের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
রথ উদযাপন কমিটির সভাপতি শুকদেব গোস্বামী, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার গোপ ও অর্থ সম্পাদক রনজিৎ সাহা জানান, জমিদার গঙ্গা গোবিন্দ সেনের হাত ধরেই আমরা এই জগন্নাথ ধামের রথ যাত্রা উৎসব পালন করে আসছি। সাচার জগন্নাথ ধাম ও সাংস্কৃতিক সংঘের আয়োজন এ বৎসর ১৫৭ তম রথযাত্রা উৎসব পালন করবো। আর এই উৎসবটিকে ঘিরে চলছে শেষ মূহূর্তের প্রস্তুতি। উৎসবে লক্ষাধিক ভক্তবৃন্দদের সমাগমে জগন্নাথ ধাম মন্দির প্রাঙ্গনে উৎসবের আমেজ বিরাজ করবে। আগামী ৭ জুলাই ১ম রথযাত্রা উৎসব ও ১৪ই জুলাই উল্টো রথযাত্রা উৎসব। সেই লক্ষ্যে আমরা সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। পুলিশের পাশাপাশি আমাদের মন্দির কমিটির স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে রথযাত্রার নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কথিত আছে যে, প্রায় দেড়শত বছর পূর্বে সাচার বাবু বাড়ির জমিদার গঙ্গা গোবিন্দ সেন ভারতে হিন্দু তীর্থস্থান পুরীতে জগন্নাথ দর্শনে গেলে, জগন্নাথ গঙ্গা গোবিন্দকে দর্শন দেয়নি। বরং পুরীর দরজা-জানালাগুলো আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। দর্শন লাভে ব্যর্থ হয়ে পরম ধার্মিক গঙ্গা গোবিন্দ সেন দর্শন লাভের আশায় পুরীর বাহিরে আমরণ-অনশন শুরু করে দেয়। অনশনের কয়েকদিন অতিবাহিত হলে গঙ্গা গোবিন্দ সেন স্বপ্নাদৃষ্ট হন যে, এ স্থানে জগন্নাথ গঙ্গা গোবিন্দ সেনকে দর্শন না দিয়ে তার সাচারের বাড়ির সম্মুখের দীঘিতে ভাসমান নিম কাঠ আকৃতিতে দর্শন দিবেন। স্বপ্নাদৃষ্ট হয়ে গঙ্গা গোবিন্দ সেন নিজ বাড়ি ফিরে আসেন এবং ক’দিন পর উক্ত দীঘিতে স্নান করার সময় আকস্মিক ভাবে ভাসমান নিম কাঠ আকৃতিতে জগন্নাথ দর্শন লাভ করেন।
ছবিঃ কচুয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সাচার রথ।
Leave a Reply