চামেলী আক্তার। মাত্র ২২ বছর বয়সেই একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। গড়ে তুলেছেন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প। ব্যবসায় সফল তরুণী এগিয়ে যাওয়ার তালিকায় চামেলী আক্তার একটি তারার নাম। চামেলী আক্তার ২০১৫ সালে এসএসসি ও ২০১৭ এইচএসসি পাস করেন। মধ্যবিত্ত এ পরিবারে জন্ম নেয়া এই যুবতী ধীরে ধীরে নিজের প্রচেষ্টায় একজন নারী উদ্যোক্ত হয়ে উঠেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি জীবন সংগ্রামে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌছতে নিয়েছেন বিভিন্ন কার্যক্রম। নিয়েছেন বিভিন্ন দফতর থেকে সরকারি-সেবরকারি প্রশিক্ষন। প্রশিক্ষন নিয়ে থেমে থাকেননি চামেলী আক্তার। সমাজে পিছিয়ে পড়া নারী কিংবা যুবতীদের তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে চামেলী আক্তার মতলব ডিগ্রি কলেজে বিএসসি তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়রনত রয়েছে। বলছিলাম চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সীমান্তবতী অজোপাড়া গাঁয়ের গ্রাম কান্দিরপাড় গ্রামের সাইফুর রহমান বাহাদুরের মেয়ে চামেলী আক্তার নামে এক জয়তি নারীর কথা।
২০১৮ সালে চামেলী আক্তার কচুয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কার্যালয়,যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও তথ্যআপা কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষন নিয়ে এখন তৈরি করেছেন পুথি করা কাপড়,নকশী কাথা,পাঞ্জাবি,বাটিকসহ নানান সামগ্রী। তার এসব তৈরি পন্য এখন তিনি ই-কর্মাসের মাধ্যম এবং অনলাই প্লাটফর্মের মাধ্যমে এগুলো বিক্রি করছেন। আয় করছেন মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
২০২০ সালে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার আয়োজনে রোকেয়া দিবসে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জয়িতা পদক পান এবং চাঁদপুরে জাতীয় এসএমই পন্য মেলায় অল্প বষয়সে নারী উদ্যোক্তা ও কার্যক্রমে সাফল্য হওয়ায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি’র হাত থেকে সনদপত্র ও সন্মননা ক্রেষ্ট গ্রহন করেন।
নারী উদ্যোক্তা চামেলী আক্তার জানান, প্রথমে সামাজিক ও কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে একটু কষ্ট হলেও বর্তমানে আর পিছে থাকাতে হয়নি। কর্মকর্তাদের পরামর্শে ও পরিবারের সৎ সাহসে এগিয়ে যাচ্ছি। আমার তৈরি গুলো পন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনলাইন অর্ডার মাধ্যমে পৌছে দিচ্ছি। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে পন্য গুলো পৌছে দেয়া হচ্ছে। এজন্য আমি কয়েকবার জেলা পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছি। এদিকে পরিবারের সদস্যরা আমাকে অনেক সাপোর্ট দিচ্ছে। ভবিষ্যতে আমি নিত্য নতুন পন্য তৈরি করে দেশ সেরা নারী উদ্যোক্তা হব এমনটাই স্বপ্ন দেখছি।
চামেলী আক্তারের দাদা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মোখলেছুর রহমান ও ছোট ভাই মশিউর রহমান অপু বলেন, চামেলী আক্তার অনেক পরিশ্রমী মানুষ। নিজের প্রচেষ্টা ও উদ্যোগকে কাজে লাগিয়ে এসব সাফল্য অর্জন করেছেন। প্রতিদিন সে পন্য তৈরি অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করছে। নিজে সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি আমাদের পরিবারকে আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করছেন।
তথ্যসেবা কর্মকর্তা আফরোজা আক্তার বলেন, তথ্য সেবা কেন্দ্রে প্রশিক্ষন নিয়েছেন চামেলী আক্তার। এ সেবা কেন্দ্রের লাল সবুজের মাধ্যমে চামেলী আক্তার তার তৈরিকৃত পন্য ই-কমার্সের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকেন। সে একজন ভালো উদ্যোক্তা বটে। তার দেখাদেখি অনেক নারীরা তথ্য সেবা থেকে প্রশিক্ষন নিচ্ছেন।
কচুয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মৃণালিনী কর্মকার বলেন, চামেলী আক্তার একজন সাহসী মেয়ে। তার অসীম সাহসিকতায় ও ইচ্ছা আগ্রহের কারনে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মাধ্যমে তার ভাগ্যকে বদলানো চেষ্টা করছেন। তার এমন্য সাফল্য ও স্বপ্ন যেন দেশের যুবতী মেয়ের অনুপ্রেরনা হতে পারে বলেও জানান তিনি।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুব উল আলম বলেন, চামেলী আক্তারকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সে আজ নানান সামগ্রী পন্য তৈরি করে অনলাইনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে। তার এমন কর্মকে স্বাগত জানাই। এ উপজেলায় কেউ উদ্যোক্ত হিসেবে কাজ করতে চাইলে তাদের প্রশিক্ষন ও আর্থিক ভাবে ঋন দিতে সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করা হবে।
নিজস্বসংবাদদাতা:মো: মাসুদ রানা ॥
Leave a Reply