1. ashraful.shanto@gmail.com : Ashraful Talukder : Ashraful Talukder
  2. newstalukder@gmail.com : Alamgir Talukder : Alamgir Talukder
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৯ অপরাহ্ন

চাঁদপুর জেলার প্রথম মুসলিম গ্রাজুয়েট: আলোকিত মানুষ আশেক আলী খান সাহেব

  • আপডেট : শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
  • ৯৮৫ বার পড়া হয়েছে

aপৃথিবীতে কিছু কিছু  মানুষ আছেন যাঁরা ক্ষণজন্মা, ত্যাগী ও ব্যতিক্রমধর্মী। তাঁরা নিজের সুখ ও আরাম-আয়েশের চেয়ে পরের উপকার, বিশেষ করে নিজ এলাকাবাসীর জন্য কল্যাণকর কাজ করতে পছন্দ করনে ও ভালবাসনে। তেমন একজন ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন মরহুম আশকে আলী খান, চাঁদপুর জেলার প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট (বাংলা একাডেমি, চরিতাভিধান, পৃঃ সংখ্যা-৭৬)। তাঁর জন্ম হয় ১৮৯১ সালে চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার গুলবাহার গ্রামের একই বাড়ির দাদা ও নানার অভিন্ন পরিবারের ভরা সংসারে। তখন গুলবাহার গ্রাম গোয়ালভাওর নামে পরিচিত ছিল। তাঁর পিতার নাম আইনউদ্দিন খান ও মাতার নাম আলেকজান বিবি ওরফে টুনি বিবি। তিনি ১৯১১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চাঁদপুর বাবুরহাট হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করনে। এই প্রেক্ষিতে উল্লেখ্য  ১৯১০ সালে র্সবপ্রথম ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার প্রচলন হয় বৃটিশ ভারতে। ওই স্কুলে পড়াকালীন তাঁর ক্লাসে তিনিই একমাত্র মুসলমান ছাত্র ছিলেন এবং ক্লাসে সবার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করতেন। কলকাতা বশ্বিবদ্যিালয়রে আওতাধীন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ১৯১৩ সালে পাস করেন ইন্টারমিডিয়েট। এরপর ঢাকা কলেেজ ইংরেজিতে অনার্সে ভর্তি হন। কিন্তু আর্থিক সঙ্কটে অনার্স কোর্স শেষ করতে পারেননি। পড়ায় বিরতি দিয়ে পর পর দুটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। পরে কলকাতায় সিটি কলেজে বিএ ভর্তি হয়ে পড়াশুনা শুরু করনে। ১৯১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে বিএ পাস করেন।
সে সময় বিএ পাস হিসেবে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি পাওয়া লোভনীয় হওয়া সত্ত্বেও তিনি শিক্ষকতাকে বেচে নিলেন পেশা হিসেবে। বিটি পড়ে র্ফাস্ট ক্লাস পেলেন ১৯১৯ সালে। প্রথমে চাঁদপুর গনি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করলেন। এই স্কুলের সরকারী মঞ্জুরি তিনি করিয়েছিলেন তৎকালীন কলকাতা বিশ্ববদ্যিালয়ের মঞ্জুরি কমিশনরে সভাপতি স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের মাধ্যমে। তখনকার দিনে স্কুলের সরকারী মঞ্জুরি পাওয়াটা ছিল কঠিন ও দুরূহ ব্যাপার। তিনি এই দুরূহ কাজটি সমাধা করে ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির কাছে আরও সুপরিচিত হলেন। সেইসঙ্গে শিক্ষা বিস্তারে  তাঁর ধীশক্তি প্রমাণ করলেন। এরপর সাব-ইন্সপেক্টর অব স্কুল হিসেবে বৃহৎ বাংলার আনাচে-কানাচে ঘুরে শিক্ষার অনগ্রসরতা ও সাধারণ লোকের আর্থ সামাজিক করুণ অবস্থা স্বচক্ষে দেখেন। পরে সাব-ইন্সপেক্টরের চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে  ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, বরিশাল জিলা স্কুল ও র্সবশেষ ঝালকাঠির সরকারী স্কুলে শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে তিনি এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দুরবস্থার  সঙ্গেও নিবিড়ভাবে পরিচিত হয়ে ছিলেন।
এরপর নিজ গ্রামে, নিজ বাড়িতে নিজের ধন-সম্পদ, জায়গা-জমি ও শ্রম দিয়ে  প্রথমে প্রাইমারী স্কুল, পরে আশেক আলী খান হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেন । ১৯৬৫ সালে এই স্কুল সরকারী অনুমোদন পায়। স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পেছনে তিনি বহু আত্মত্যাগ করে স্থানীয় লোকজনকে শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর স্থাপিত আশেক আলী খান হাইস্কুল হতে তাঁর জীবিতাবস্থায় বহু ছেলেমেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পায়।
বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে স্থানীয় লোকদের উদ্বুদ্ধ করে শিক্ষার আলো তিনি জ্বালিয়ে গেছেন । র্বতমানে তাঁর স্থাপিত স্কুলে মাধ্যমকি ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষা বিস্তার ছাড়াও যোগাযোগের জন্য তাঁর একান্ত  প্রচষ্টোয় গুলবাহার  গ্রামে স্কুলের পাশে ডাকঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত রাখার জন্য স্কুলেল পাশে মসজিদ গড়েছেন। আশেক আলী খান সাহেবের চার মেয়ে ও চার ছেলে এবং তাঁদের নাতি-নাতনি সবাই জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং সমাজে স্ব স্ব র্কমকান্ডে সুপরিচিত।
বড় ছেলে প্রয়াত আলহাজ্ব মেসবাহ উদ্দীন খান উচ্চ শিক্ষা শেষে চট্রগাম ডকইয়ার্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে সুনাম ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে ১৯৯১ সালে  চাঁদপুর-১ (কচুয়া )আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন,তাঁর ছেলে ড.মুনতাসীর মামুন ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ,তিনি  (সাহিত্যে)একুশে পদক লাভ করেন। দ্বিতীয় ছেলে ড. বোরহান উদ্দীন খান জাহাঙ্গীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং শিক্ষায় একুশে পদক লাভ করেন। তৃতীয় ছেলে ড.মহীউদ্দীন খান আলমগীর আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার মূখ্য সচিব হিসাবে সরকারি চাকুরী থেকে অবসর গ্রহনের পর  বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ও স্বরাস্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং দুবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে চাঁদপুর-১ (কচুয়া )আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। চতুর্থ ছেলে ড. হেলাল উদ্দীন খান সামসুল আরেফিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির প্রোভিসি হিসাবে দায়িত্বরত আছেন। তাঁর সুযোগ্য কন্যা  নীলুফার বেগম চট্রগ্রাম বিভাগের প্রথম মহিলা যুগ্ম সচিব হিসেবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তাঁর সুযোগ্য সন্তান ড.নাজমূল আহসান কলিমুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও বেসরকারি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিপপের চেয়ারম্যান।
নিবেদিত প্রাণ শিক্ষাসেবী, গ্রামপে্িরমক, সমাজ সংস্কারক ও মানবদরদি আশেক আলী খান ১৯৭৪ সালরে ২ আগস্ট মৃত্যুবরণ করনে। মৃত্যুর পর তাঁর অসমাপ্ত  কাজ এগেিয় চলে সুযোগ্য সন্তানদের সহায়তায়। এ প্রেক্ষিতে তাঁর তৃতীয় পুত্র ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের গ্রামোন্নয়নের অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি পিতার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে ১৯৮৫ সালে আশেক আলী খান হাইস্কুলকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সাহায্যে আরও উন্নত স্কুলে পরিণত করেছেন। তাছাড়া কচুয়া উপজেলায়  পৌরসভাসহ নানাবিধ ক্ষেত্রে  উন্নয়নের   জোয়ার  এনেছেনে তাঁর সুযোগ্য পুত্র ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার একটু পশ্চিমে এগিয়ে কচুয়া-কাশিমপুর সড়কের পাশে গুলবাহার গ্রামে আশেক আলী খান হাইস্কুল ও কলেজ, যেখানে শিক্ষার অনির্বাণ শিখা জ্বলছে। স্কুল-কলেজের কাছেই নিজ বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন গ্রামবাসীর আপনজন সকলের ইংরজেী জানা “বাঙালী সাহেব” আশেক আলী খান।

সুত্র : নীলুফার বেগম
প্রয়াত আশেক আলী খান সাহেবের কনিষ্ঠ কন্যা
সৌজন্যে : সাপ্তাহিক কচুয়া বার্তা

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায় মাল্টিকেয়ার