আইনি সব প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি হওয়ার পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তোড়জোড়ের মধ্যে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই চিঠি দেওয়ার কথা জানান বিএনপি নেতার স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে দলের নেতাদের পাশে রেখে এই সালাউদ্দিন কাদেরের ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, শনিবারই এই চিঠি বঙ্গভবনে পৌঁছে দেবেন তারা।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা সালাউদ্দিন কাদেরের সঙ্গে আইনজীবীদের দেখা করার সুযোগ দিতেও দাবি জানিয়েছে তার পরিবার।
এরপর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে চিঠি নিয়ে বঙ্গভবনে যান ফরহাত কাদের ও ছেলে হুম্মাম। বঙ্গভবনের ফটকের সামনে গাড়িতে বসে ছিলেন ফরহাত।
‘পিটিশন টু দ্য অনারেবল প্রসিডেন্ট ফ্রম সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী’ শিরোনামের চিঠিটি নিয়ে হুম্মাম ভেতরে গেলে গেলে মূল ফটকের রিসিপশনে তাকে বসানো হয়।
বঙ্গভবনের ডেসপাচ শাখার কর্মকর্তারা তাকে জানান, রাষ্ট্রপতির কাছে সরাসরি কোনো আবেদন করা যায় না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি দিতে হবে।
এর পর হুম্মাম রিসিপশন থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের বলেন, তাদের চিঠি নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দিতে বলা হয়েছে।
আইনি লড়াই শেষ হওয়ার পর এখন শুধু দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ আছে সালাউদ্দিন কাদেরের। সে আবেদন তিনি করেছেন বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দুপুর আড়াইটায় জানান।
তবে এই বিএনপি নেতা ক্ষমা চেয়েছেন কি না- তা নিয়ে নিজের সংশয়ের কথা জানান ছেলে হুম্মাম।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বাবা ক্ষমা চেয়ে মার্সি পিটিশন চাইবেন? এটা আমি তার সঙ্গে কথা না বলে কিছু বলতে পারব না।”
আইনমন্ত্রী তা জানিয়েছেন- বলা হলে তিনি হুম্মাম বলেন, “আনিসুল হক ভাল করেই জানেন, বাবা কী বলতে পারেন। আমার বাবা কী ধরনের লোক, তা সবাই জানে।”
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে হুম্মাম বলেন, ক্ষমার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন তার বাবা এবং আইনজীবীদের সঙ্গে তার সাক্ষাতের সুযোগ হলেই তা জানা যাবে।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিন কাদেরের ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরীও ছিলেন।
বিকাল ৫টার দিকে তিনি ছিলেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে। সেখানে তিনিও সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষমা চেয়ে তার বাবা আবেদন করেছেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে তাদের।
দুই যুদ্ধাপরাধীর পরিবারের সদস্যরা আইনজীবীদের কারাগারে দেখা করার সুযোগ চাইলেও তার সুযোগ এখন আর নেই বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, এখন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কোনো আবেদনের সুযোগ নেই দণ্ডিতের।
সালাউদ্দিন কাদেরের পরিবারকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, ওসমান ফারুক,মাহবুবউদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ।
বিএনপি নেতাদের পাশে রেখে ফরহাত কাদের বলেছিলেন, “ক্রটিপূর্ণ বিচারের বিষয়ে আমরা আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দেবে। কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা বঙ্গভবনে যাব চিঠি দিতে।
“উনি (সালাহউদ্দিন কাদের) আমাকে বলেছেন যে, দীর্ঘ ৩০ বছর রাষ্ট্রপতি সংসদের সদস্য ছিলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীও সদস্য ছিলেন। তিনি আশা করেন, বিষয়টি দেখে তিনি (রাষ্ট্রপতি) একটা পদক্ষেপ নেবেন।”
‘মিস ট্রায়ালের’ বিষয়ে বিভিন্ন ‘পেপারস’ রাষ্ট্রপতির নজরে আনবেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন প্রশ্ন তুলে এসেছিল; যার প্রতিক্রিয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অর্থ দিয়ে ‘লবিস্ট’ নিয়োগ দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা চলছে।
রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে সালাহউদ্দিন কাদেরের সিদ্ধান্ত কী- জানতে চাইলে তার স্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা এই বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। এটা উনার ব্যাপার। আমরা যখন তাকে জিজ্ঞসা করেছি, তখন তিনি বলেছেন, ‘আইনজীবীর কাছে বলব’।”
হুম্মাম বলেন, “মার্সি পিটিশনের ব্যাপারে আমরা একটা কথা তুলে ধরতে চাই। যতক্ষণ পর্যন্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী আইনজীবীকে কাছে না বলেন, উনার সিদ্ধান্ত কী, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা বলতে পারছি না, বাবার সিদ্ধান্ত কী।
“ম্যাজিস্ট্রেট দুজন এখন আমার বাবার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছ থেকে আমরা কী তথ্যটা পাব। ওটা কি সঠিক উত্তর কি না, তাও আমরা বলতে পারছি না। সে কারণে আমরা বার বার বলছি, উনার সঙ্গে আইনজীবীদের দেখা করা অতি জরুরি।”
ফরহাত কাদের বলেন, “আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি। এটা আমাদের ব্যক্তিগত অনুভূতি, বিএনপি আমাদের পাশে আছে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে মন্ত্রীর মর্যাদায় খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির গয়েশ্বর বক্তব্য রাখেন। তারপর কথা বলেন সালাউদ্দিন কাদেরের পরিবারের সদস্যরা।
গয়েশ্বর বলেন, “আমাদের সহকর্মী এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আজ মৃত্যুর সম্মুখীন। ইতোমধ্যে আমাদের দল এই ট্রায়ালের ব্যাপারে মত প্রকাশ করেছে। শুরু থেকেই আইসিটির অধীনের এই মামলার প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের কড়া নজর ছিল।
“তারা সরকারের এই বিচার শুরু করাকে সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু পৃথিবী এখন দেখছে যে কীভাবে আদালত তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে এবং নিজ স্বার্থের অপব্যবহার করছে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার পরিবারকে এই বিচারের সমালোচনা না করে পরামর্শ দিয়েছেন, তারা যেন আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে।”
Leave a Reply