অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলায় বুধবার মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ের আদালতে এই বিএনপি নেতাকে অভিযুক্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ঠিক হয়েছে আগামী ৩০ জুলাই।
ঢাকা থেকে উধাও হওয়ার দুই মাস পর গত মে মাসে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর সন্ধান মিলেছিল মেঘালয়ে। তখন তিনি দাবি করেন, তাকে বাংলাদেশ থেকে অপহরণ করা হয়েছিল।
অভিযোগ গঠনের শুনানির আগে সালাহ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোর্ট যে রায় দিক, আমি আমার দেশে ফিরে যেতে চাই।”
বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে ঢোকার অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্টের ১৪ ধারায় এই মামলা হয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে।
ভারতের পাসপোর্ট আইনে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলার সাত সাক্ষী ইতোমধ্যে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
ওই আদালতের পিপি আইসি ঝা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, বিএনপির এই নেতা অনুপ্রবেশের অভিযোগ স্বীকার করে নিলে বিচারক বুধবারই রায় জানিয়ে দিতে পারেন।
তবে আদালতে অভিযোগ গঠনের শুনানিতে সালাহ উদ্দিন নিজের ইচ্ছায় ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশের কথা স্বীকার করেননি।
তিনি আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বিচারে যাওয়ার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ার মধ্য দিয়ে ভারতে থেকে যাওয়ার প্রয়াস চালালেন বলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা মনে করছেন।
তারা বলেন, যদি এই রাজনীতিক দোষ স্বীকার করে নিতেন, তাহলে হয়ত কয়েক মাসে
র ন্যূনতম সাজা দিয়েই রায় দিতে পারত আদালত। তাতে সাজাভোগের পর তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হত।
তার আইনজীবী এস পি মহান্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যেহেতু সালাহ উদ্দিন নিজে অবৈধভাবে ভারতে ঢোকেননি, তাই তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
অভিযোগ গঠনের পর আইসি ঝা বলেন, আদালত তিন থেকে চার দিনের শুনানির পরই রায় দিতে পারে।
গত ১১ মে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে হদিস মেলার পর আটক হয়ে কিছু দিন কারা হেফাজতে হাসপাতালে ছিলেন সালাহ উদ্দিন। স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করে পরে তাকে জামিন দেয় আদালত।
এরপর মেঘালয় পুলিশ গত ৩ জুন সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে এই মামলায় অভিযোগপত্র দেয়। তার ভিত্তিতে বুধবার অভিযোগ গঠন হয় মেঘালয়ের বিচারিক হাকিম কেএমএল নংব্রির আদালতে।
শুনানির জন্য সালাহ উদ্দিন তার আইনজীবীকে নিয়ে সকালে জেলা দায়রা আদালতে এলে সেখানেই তার সঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কথা হয়।
সালাহ উদ্দিন বলেন, তার শরীরের অবস্থা এখন ‘ভালো’। আর দেশে ফেরার ক্ষেত্রে তার ‘কাউকে ভয় পাওয়ারও কিছু’ নেই।
আদালতের বাইরে এক আত্মীয়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে এক কাপ চা খাওয়ার পর ভেতরে ঢুকে যান সালাহ উদ্দিন।
৫৪ বছর বয়সী সালাহ উদ্দিনের দাবি, অচেনা এক দল লোক ঢাকার এক বাড়ি থেকে তাকে তুলে নিয়েছিল। এরপর আর কিছুই তিনি মনে করতে পারেন না।
শিলংয়ে খোঁজ মেলার পর আচরণ অসংলগ্ন মনে হওয়ায় বাংলাদেশের সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীকে প্রথমে একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করেছিল পুলিশ।
স্বামীর সন্ধান পাওয়ার পর শিলংয়ে ছুটে যান সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। তিনি চিকিৎসার জন্য স্বামীকে ভারত থেকেই সিঙ্গাপুরে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে আদালতে তার আবেদন নাকচ হয়ে যায়।
বিএনপির এই নেতা এ মুহূর্তে দেশে ফিরে গ্রেপ্তার হওয়ার চেয়ে ভারতেই দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে আগ্রহী বলে তার ঘনিষ্ঠরা এর আগে জানিয়েছিলেন।
নিখোঁজ হওয়ার আগে বিএনপির অবরোধ-হরতালে নাশকতায় প্রাণহানির মধ্যে অজ্ঞাত স্থান থেকে প্রায় এক মাস বিবৃতি পাঠিয়ে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন সালাহ উদ্দিন।
সে সময় নাশকতার বিভিন্ন মামলায় তাকে আসামি করা হয়। ভারতে হদিস মেলার পর সালাহ উদ্দিনকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে ইন্টারপোলের একটি ‘রেড নোটিস’ পাঠানোরও খবর আসে।
Leave a Reply