জবাবে দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ বিনা উইকেটে ৭ রান। তামিম ইকবাল ১ ও ইমরুল কায়েস ৫ রানে ব্যাট করছেন। এখনও ২৪১ রানে পিছিয়ে আছে স্বাগতিকরা।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয় দক্ষিণ আফ্রিকার। টানা বৃষ্টির কারণে গত কয়েক দিন কাভার ঢাকা থাকায় উইকেট কেমন আচরণ করবে, তা নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু ম্যাচের দিন সকালে রোদ উঠার পর সেই শঙ্কা কেটে যায়।
ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে শুরুতে ব্যাটিংয়ের সুবিধা কাজে লাগাতে ভুল করেননি ডিন এলগার, স্টিয়ান ফন জিল ও ফাফ দু প্লেসি। উইকেটে বোলারদের জন্য খুব একটা সুবিধা ছিল না, তার ওপরে নিজেদের প্রথম স্পেলে ভালো করতে পারেননি শহীদ ও অভিষিক্ত মুস্তাফিজ।
দুই বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান এলগার ও ফন জিলকে থামাতে দ্বাদশ ওভারে মাহমুদউল্লাহকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই আঘাত হানেন মাহমুদউল্লাহ। ফন জিলকে লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। এটাই টেস্টে লিটনের প্রথম ডিসমিসাল।
দ্রুত রান তুলতে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় ১ উইকেটে ১০৪ রান নিয়ে। দ্বিতীয় ইনিংসের শুরু থেকেই আঁটসাঁট বোলিং করে স্বাগতিকরা। সঠিক লাইন ও লেংথ খুঁজে পান শহীদ, মুস্তাফিজরা। দ্বিতীয় স্পেলে প্রথমবারের মতো বল করতে এসে দুই থিতু ব্যাটসম্যানকে কয়েকবার পরীক্ষায় ফেলেন জুবায়ের।
এলগার-দু প্লেসির ৭৮ রানের জুটির সুবাদে এ সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর দাঁড়ায় ১ উইকেটে ১৩৬ রান। বিপজ্জনক হয়ে উঠা ৩৩.১ ওভার স্থায়ী দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভাঙার কৃতিত্ব তাইজুল ইসলামের। তার বলে এলগার লিটনের দ্বিতীয় প্রচেষ্টার ক্যাচে পরিণত হন।
দ্বিতীয় স্পেলে প্রথম বলেই আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান; এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন ফাফ দু প্লেসি। একই রানে দুই থিতু ব্যাটসম্যানের বিদায়ে ইনিংস পুনর্গঠনে অধিনায়ক হাশিম আমলার দিকে তাকিয়ে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় সেশনে আমলা-টেমবা বাভুমার ব্যাটিংয়ে ছিল সামাল দেওয়ার ইঙ্গিত।
দ্বিতীয় সেশনে ২৯ ওভার ব্যাট করে ৬১ রান তুলতেই দুই থিতু ব্যাটসম্যানকে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এই সেশনের শুরু থেকে আঁটসাঁট বোলিংয়ে এলগার-দু প্লেসিকে বেধে রাখার ফলেই দুই উইকেট পায় স্বাগতিকরা।
তৃতীয় সেশনের তৃতীয় ওভারে মুস্তাফিজ গুঁড়িয়ে দেন অতিথিদের বড় স্কোরের স্বপ্ন। চার বলের মধ্যে আমলা, জেপি দুমিনি ও কুইন্টন ডি কককে ফিরিয়ে দেন এই বাঁহাতি পেসার।
মুস্তাফিজের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে শট খেলতে গিয়ে আমলা ক্যাচ দেন লিটনকে। এলবিডব্লিউ হন দুমিনি। আম্পায়ার আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় স্বাগিতকরা। তাতে সিদ্ধান্ত পাল্টে দুমিনিকে আউট দেন আম্পায়ার জুয়েল উইলসন।
মুস্তাফিজের হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেওয়া ডি কক এরপর টিকেন মাত্র এক বল। দুর্দান্ত এক বলে তার অফ স্টাম্প উড়িয়ে ফেলেন বাংলাদেশের এই তরুণ পেসার। চার বলে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকা আড়াইশ’ রানের কাছাকাছি যায় বাভুমার দৃঢ়তায়।
১৭৩ রানে ৬ উইকেটে হারানো দক্ষিণ আফ্রিকা প্রতিরোধ গড়ে বাভুমা-ভার্নন ফিল্যান্ডারের ব্যাটে। তাদের ৩৫ রানের জুটিতে দুইশ’ পার হয় অতিথিদের সংগ্রহ। জুবায়েরের বলে ফিল্যান্ডার স্লিপে সাকিবের ক্যাচে পরিণত হলে ভাঙে এই জুটি।
পরে জোড়া আঘাতে সাইমন হারমার ও ডেল স্টেইনকেও ফেরান জুবায়ের। তার শর্ট বলে সজোরে মারতে গিয়ে শর্ট লেগে মুমিনুল হকের ক্যাচে পরিণত হন হারমার। আরেকটি শর্ট বল তুলে মারতে গিয়ে মিডঅফে তামিম ইকবালের ক্যাচে পরিণত হন স্টেইন। ৫৩ রানে ৩ উইকেট নেন লেগ স্পিনার জুবায়ের।
অতিথিদের দ্রুত অল আউট করতে ৮০ ওভার শেষে দ্বিতীয় নতুন বল নেন মুশফিক। ৮১তম ওভারেই অলআউট হয়ে যেতে পারত অতিথিরা। কিন্তু ইমরুল কায়েসের ব্যর্থতায় বেঁচে যান বাভুমা। এর আগে শহীদের বলেই ফিল্যান্ডের ক্যাচ ছেড়েছিলেন তিনি।
টানা সাতটি মেডেন ওভার নেওয়া শহীদ দারুণ বল করলেও কোনো উইকেট পাননি। ১৭ ওভার ৯টি মেডেন নেওয়া এই পেসার দেন ৩৪ রান।
জীবন পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেননি বাভুমা। প্রথম টেস্ট অর্ধশতকে পৌঁছানো এই ব্যাটসম্যান মুস্তাফিজের বলে সীমানায় জুবায়েরের ক্যাচে পরিণত হন। ৩৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার মুস্তাফিজ। অভিষেকে এটি স্বাগতিক পেসারদের দ্বিতীয় সেরা বোলিং।
তিন টেস্ট পর সাকিবসহ পাঁচ বোলার নিয়ে খেলেই সাফল্য পেল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর এই প্রথম কোনো দলকে এক দিনেই অল আউট করল তারা। বোলারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১১২ রানে অতিথিদের শেষ ৯ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেয় মুশফিকরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৮৩.৪ ওভারে ২৪৮ (এলগার ৪৭, ফন জিল ৩৪, দু প্লেসি ৪৮, আমলা ১৩, বাভুমা ৫৪, দুমিনি ০, ডি কক ০, ফিল্যান্ডার ২৪, হারমার ৯, স্টেইন ২, মরকেল ৩*; মুস্তাফিজ ৪/৩৭, জুবায়ের ৩/৫৩, মাহমুদউল্লাহ ১/৯, সাকিব ১/৪৫, তাইজুল ১/৫৭ )
Leave a Reply