কচুয়া বার্তা ডট কম
ডেস্ক রিফোর্ট : বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে হোঁচট খাওয়ার পর দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে বিএনপি। দলটির তৃণমূল থেকে কেন্দ্র ছাড়াও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এছাড়া আগামী ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগেই ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করার চিন্তাভাবনা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দল পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে বিগত দিনের কার্যক্রম মূল্যায়ন করে সব পর্যায়ের নেতৃত্ব নির্বাচন করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি বিএনপির হাইকমান্ড অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্বেও যোগ্য এবং তরুণদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বলে দলীয় একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় জাতীয় নির্বাহী কমিটিসহ প্রায় সব সাংগঠনিক জেলা এমনকি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বেশিরভাগ কমিটিই বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ। দীর্ঘদিন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে কার্যক্রম চালানোয় দেখা দিয়েছে সাংগঠনিক স্থবিরতা। কমিটি না হওয়ায় কেউ ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছেন না। দলের ভেতরেই অভিযোগ আছে গত জাতীয় কাউন্সিলের পর দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে অনেক অযোগ্য নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। স্বজনপ্রীতিসহ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ওইসব পদ দেওয়া হয় বলেও ব্যাপক সমালোচনা ছিল। দলপুনর্গঠনে তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করেন, সুযোগ সন্ধানী ও ব্যবসায়ীরা গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ায় বিগত আন্দোলনে গা-ঢাকা দেন তারা। এ কারণে আন্দোলনেও মাঠে ছিল না কেউ। ঢাকা মহানগরসহ কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নিষ্ক্রিয় নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ক্ষোভ জানিয়ে আসছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা।
বিএনপির সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর দল পুনর্গঠন করেছিল বিএনপি। ২০০৯ সালের জুন মাসে একসঙ্গে ৭২টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। ওই বছর ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে গঠন করা হয় ৩৮৬ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নির্বাহী কমিটি। তিন বছর মেয়াদি কমিটির সময় আড়াই বছর আগেই শেষ হয়েছে। এর আগে দুই দফা জাতীয় কাউন্সিল করার প্রস্তুতি নিলেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে তা করতে পারেনি বিএনপি।
সূত্রমতে, আগামী ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগেই ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। ওই কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের প্রধান সাংগঠনিক মহাসচিব পদে পরিবর্তন আসতে পারে। তুলনামূলক তরুণ নেতাদের মধ্য থেকে দলের মহাসচিব হিসেবে কাউকে দেখা যেতে পারে। যদি পরিবর্তন না হয় তাহলে দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্তের ভারমুক্ত হতে পারেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতীয় কাউন্সিলের আগেই একযোগে ভেঙে দেয়া হবে বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি। একই সঙ্গে দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ পদেও আনা হবে ব্যাপক রদবদল। সেক্ষেত্রে যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, মহিলা দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, জাসাস, ওলামা দল, তাঁতি দল ও মৎস্যজীবী দলের নেতৃত্বে দেখা যেতে পারে এক ঝাঁক নতুন মুখ।
দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার যুবদলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম আজাদকে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। প্রয়াত দলের নেতা নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর স্থলাভিষিক্ত হলেন তিনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি তাইফুল ইসলাম টিপুকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করা হয়। দলের গঠনতন্ত্রের প্রাপ্ত ক্ষমতা বলে খালেদা জিয়া তাদের এ দায়িত্ব দিয়েছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। দেশের পাশাপাশি দল পুনর্গঠনের ছোঁয়া লেগেছে বিদেশের শাখাগুলোয়ও। একই দিনে যুক্তরাজ্য বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে আবদুল মালেককে সভাপতি ও এমএ কয়সার আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। শায়েস্ত চৌধুরী কুদ্দুস হয়েছেন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে জে (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, দলপুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। সাংগঠনিকভাবে দলে কোথায় দুর্বলতা আছে সেগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিগত আন্দোলনের ভূমিকা ও দলের ত্যাগী, যোগ্য ও মেধাবীদের বিভিন্ন পর্যায়ের সাংগঠনিক ইউনিটগুলোর নেতৃত্বে দায়িত্ব দেওয়া হবে। রাজপথে সাহসী ভূমিকা পালনের জন্য তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পর্যন্ত নেতৃত্বে তরুণদের আনার চিন্তভাবনা করা হচ্ছে বলেও জানান বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই নেতা।
Leave a Reply