“৪০ বছর শুনতে হল- ‘গোলামীর চুক্তি’। এখন সবাই উপলব্ধি করছে, কত বড় অপপ্রচার চালানো হয়েছিল। আজ বাংলাদেশ যে লাভবান হয়েছে, তা প্রমাণিত।”
১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তি কার্যকরে ভারতের পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব পাস হওয়ার দুদিন পর শনিবার গাজীপুরে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে একথা বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়, যার প্রধান লক্ষ্য ছিল দুই দেশের স্থল সীমান্ত নিয়ে সমস্যার সমাধান। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগবিরোধীরা সব সময়ই এই চুক্তিকে ‘গোলামীর চুক্তি’ বলে এসেছে।
ওই চুক্তির আওতায় ছিটমহল বিনিময় এবং অপদখলীয় ভূমি সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালেই সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধন করেছিল।
কিন্তু তা আটকে ছিল ভারতের দিকে। কারণ, ভূমি ছাড়তে হলে ভারতের সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন। বৃহস্পতিবার ভারতের লোকসভায় ভারতের সংবিধান সংশোধনের ওই প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হওয়ায় চুক্তি কার্যকরে আর বাধা রইল না।
গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ষোড়শ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, “একটি এমপিও আপত্তি করে নাই। সর্বসম্মতিক্রমে এই বিলটি পাস করে দিয়েছে।
“এটা বাংলাদেশের জন্য একটা বিরাট অর্জন। সকলে এক হয়ে বাংলাদেশের পক্ষে ভোট দিয়েছে। একটিও না ভোট পড়ে নাই।”
১৯৭৪ সালের ওই চুক্তির সমালোচনা করে এলেও ভারতের সঙ্গে অমীংসিত সব সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের অন্য দলগুলোর সরকারের উদ্যোগহীনতার কথাও বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
“পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় আসে, তাদের এই সীমান্ত চুক্তি র্যাটিফাই করতে হবে, তা বলার সাহসই পায়নি।”
২০১০ সালের জানুয়ারিতে নিজের ভারত সফরের সময় যৌথ বিবৃতিতে এই চুক্তির বিষয়টি উল্লেখের তথ্য জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “অনেকেই ভারত সফর করেছেন। ভারতের অনেক প্রধানমন্ত্রী এসেছেন। কেউ যৌথ ঘোষণায় সীমান্তের কথা বলেন নাই।
“ফারাক্কায় দৌড়, জাতিসংঘে গেছে, অমুক-তমুক করেছে অনেকে। আমাদের ‘ভারতের দালাল’-‘ভারতের দালাল’ শুনতে হয়েছে। আর, তারা অধিকার আদায় করতে পারে নাই। ওপরে গালি, আর ভেতরে পা ধরে বসে ছিল।”
বৃহস্পতিবার লোকসভায় সংবিধান সংশোধনের ওই বিল পাস হওয়ায় পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয় শেখ হাসিনার। তিনি তাদের ধন্যবাদও জানান।
শনিবারের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা সোনিয়া গান্ধী এবং বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্য আসাম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলে তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসাতেই ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর মীমাংসা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যদি আবার ক্ষমতায় না আসত, তাহলে এটা হত না।
বক্তব্যে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী তিন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী টিউলিপ সিদ্দিক, রুশনারা আলী ও রূপা হকের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে এমপি হয়েছেন। বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন সিলেটের মেয়ে রুশনারা আলী। রুপা হক এমপি হয়েছেন ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে।
শেখ হাসিনা বলেন, “দুই শত বছর গোলামী করতে হয়েছে। এখন বৃটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশের এমপি।”
লেবার পার্টির হয়ে একটি কঠিন আসনে নিজের ভাগ্নির জয়ী হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “টিউলিপ একটি কঠিন সিটে জিতে এসেছে।
“লেবার পার্টির হারানো সিট উদ্ধার করেছে বাংলাদেশের মেয়ে রূপা হক। আর রুশানারা তো এবার দ্বিতীয়বার এমপি হল।
“দুইশ বছর গোলামী করতে হয়েছে। এখন আমরাই সেখানে।”
Leave a Reply