1. ashraful.shanto@gmail.com : Ashraful Talukder : Ashraful Talukder
  2. newstalukder@gmail.com : Alamgir Talukder : Alamgir Talukder
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন

বিটিশ নির্বাচনে ইতিহাস গড়ার আশায় বাংলাদেশিরা

  • আপডেট : সোমবার, ৪ মে, ২০১৫
  • ৮৩০ বার পড়া হয়েছে

কচুয়াবার্তা ডটকম

০৫/০৫/২০১৫

 

brtকচুয়াবার্ত ডেস্ক রিপোর্ট : ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে সরকার গঠনের সমীকরণ তত জটিল হচ্ছে। ২০১০ সালে দুটি দল মিলে সরকার গঠন করেছিল। এবার প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রধান দুটি দলের বাইরে অন্তত তিনটি দল নিয়ামক ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে। একটি লিবডেম; বাকি দুটি ইউকেআইপি ও গ্রিন পার্টি। তবে দলভিত্তিক হিসাব যা-ই হোক, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এবার বাংলাদেশিদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ার ইঙ্গিত নির্বাচনী জরিপগুলোতে দেওয়া হয়েছে।নির্বাচনবিষয়ক বিভিন্ন জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, দুইয়ের বেশি দলের সমন্বয়ে একটি কোয়ালিশন সরকার গঠনের দিকে এগোচ্ছে ব্রিটেন। যদি তা-ই হয় তাহলে পরবর্তী সরকারের মেয়াদ পূরণ নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।আগামী বৃহস্পতিবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একে ঘিরে ব্রিটেনবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে; তাদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনাও বিপুল। এর কারণ ব্রিটেনের মূলধারার দলগুলো থেকে এবারই সর্বাধিক ১৩ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী মনোনয়ন পেয়েছেন। গত নির্বাচনে একমাত্র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিসেবে রুশনারা আলী নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার বাংলাদেশিদের প্রতিনিধিত্ব বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।এখন পর্যন্ত নির্বাচন সামনে রেখে যতটি জরিপ প্রকাশিত হয়েছে তাতে কোনো দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। কনজারভেটিভ পার্টি ও লেবার পার্টির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে- এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। প্রভাবক ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে ইউকে ইনডিপেনডেন্ট পার্টি (ইউকেআইপি) ও গ্রিন পার্টির মতো ছোট দলগুলো। বিভিন্ন ইস্যুতে বড় দলগুলোর প্রতি ভোটারদের নেতিবাচক মনোভাব এসব দলের আসন বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।ব্রিটেনের নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মতে, এবার দুইয়ের বেশি দলের সমন্বয়ে কোয়ালিশন সরকারের দিকেই এগোচ্ছে ব্রিটেন। আগে কনজারভেটিভ ও লেবার পার্টির বাইরে তৃতীয় বড় শক্তি ছিল লিবারেল ডেমোক্র্যাটস (লিবডেম)। এবার লিবডেমের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ইউকেআইপি। বর্ণবাদী এই দল প্রতিশ্র“তি দিয়েছে, তারা ব্রিটেনে অভিবাসন কমাবে, ব্রিটেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে দ্রুততম সময়ে বের করে নেবে, সব ক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গদের প্রাধান্য দেবে প্রভৃতি। এসব প্রতিশ্র“তির কারণে বড় দুই দলের প্রতি নাখোশ ভোটাররা তাদের প্রতি ঝুঁকছেন। ফলে এত দিন যেসব ‘ইংলিশ’ ভোটার লেবার পার্টিকে ভোট দিতেন, তাঁরা যদি ইউকেআইপিকে বেছে নেন তাহলে সরকার গঠনের সমীকরণে এগিয়ে যাবে কনজারভেটিভ পার্টি। আর কনজারভেটিভের ওপর নাখোশ ভোটাররা যদি ইউকেআইপির দিকে ঝোঁকেন তাহলে সরকার গঠনের ভিন্ন সমীকরণ তৈরি হবে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত যেসব জরিপ প্রকাশিত হয়েছে তাতে এ বিষয়টি স্পষ্ট।সাধারণত ব্রিটেনে নির্বাচনের ফলাফল ও নির্বাচনী জরিপের ফলাফলে খুব বেশি তারতম্য হয় না। অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান নির্বাচনী জরিপ করে থাকে। এসবের মধ্যে ইউগভ, মরিস ও আইসিএম নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে প্রতিদিনই বিভিন্ন ইস্যুতে জরিপ চালায়। নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে জরিপের ফলাফলের সামঞ্জস্য থাকে।গত বুধবার মধ্যরাতে স্কাই নিউজ প্রকাশিত জরিপের ফলাফল অনুযায়ী কনজারভেটিভ পার্টির ৩৫ শতাংশ, লেবার পার্টির ৩৫ শতাংশ, লিবডেমের ৭ শতাংশ, ইউকেআইপির ১১ শতাংশ এবং অন্য দলগুলোর ১২ শতাংশ ভোটার-সমর্থন রয়েছে। শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা ডেইলি সানের পাঠক জরিপ অনুযায়ী কনজারভেটিভ পার্টি লেবার পার্টির চেয়ে এগিয়ে রয়েছে মাত্র ১ শতাংশ ভোটে। ডেইলি মেইলের জরিপে বলা হয়েছে, এখনো সিদ্ধান্তহীন ৪০ শতাংশ ভোটারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তেই গঠিত হবে পরবর্তী সরকারের রূপরেখা।স্কাই নিউজ, বিবিসি, আইটিভি, চ্যানেল ফোর, বিবিসি রেডিও ফোর- সব গণমাধ্যমেই রাজনীতি-বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার অনেক দলের প্রতিনিধিত্বসহ ঝুলন্ত পার্লামেন্ট পেতে যাচ্ছে ব্রিটেন। এ কারণে অনেকেই এ পার্লামেন্টের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।ইউগভ-এর হেড অব পলিটিক্যাল রিসার্চ জো থাইম্যানের মতে, যদি কনজারভেটিভ দল ২৯০ আসন পেয়েও যায় এবং লিবডেম ২৫ আসন জোগাড় করতে সক্ষম হয় তার পরেও কোয়ালিশন সরকার গঠনের জন্য আরো আসনের দরকার হবে। তাদের হাতে বিকল্প থাকছে ইউকেআইপি ও ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টিকে (ডিইউপি) নিয়ে বহুদলীয় কোয়ালিশন সরকার গঠন। লেবার পার্টি যদি ২০টি আসন বেশি নিয়ে এগিয়ে যায়, তার পরেও তাদের লিবডেম এবং স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টিকে (এসএনপি) নিয়ে ত্রিদলীয় কোয়ালিশন সরকার গঠনের চেষ্টা করতে হবে।

বাড়বে বাংলাদেশিদের প্রতিনিধিত্ব : ব্রিটেনের পার্লামেন্টে এবার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের প্রতিনিধিত্ব বাড়বে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ১৩ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্তত তিনজন প্রার্থীর জয়লাভের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। তিনজনই নারী। তাঁরা হচ্ছেন গত নির্বাচনে বিজয়ী লেবার পার্টির প্রার্থী রুশনারা আলী, একই দলের রূপা হক ও টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দীক। রুশনারা বাঙালি অধ্যুষিত ‘বেথনাল গ্রিন ও বো’ আসনে লড়ছেন। গতবারও এখান থেকেই নির্বাচন করে জয়ী হন। রুশনারার বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায়। সব জরিপের ফলাফলেই তাঁর বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ার কথা বলা হয়েছে। রূপা হক ও টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দীকের জয়ের কথাও জরিপে বলা হয়েছে। রূপা হক লেবার পার্টির হয়ে ‘ইলিং সেন্ট্রাল ও একটন’ আসন থেকে লড়ছেন। জনমত জরিপে এখনো তিনি কনজারভেটিভের প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে আছেন। ড. রূপা হক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক। শিক্ষকতা করছেন লন্ডনের কিংস্টন ইউনিভার্সিটিতে। তাঁর মা-বাবা ১৯৬০ সালে ব্রিটেনে যান। তাঁর পৈতৃক বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর গ্রামে।বঙ্গবন্ধুর নাতনি শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দীক ক্যামডেন এলাকার ‘হ্যামস্টেড ও কিলবার্ন’ আসনে লেবার দলের হয়ে লড়ছেন। এ আসনে টোরি (কনজারভেটিভ), লিবডেম ও লেবার পার্টির সমান আধিপত্য। তবে বিভিন্ন জরিপে টিউলিপের জয়ের ঈঙ্গিত আশাবাদী করে তুলেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে ক্যামডেন কাউন্সিলের প্রথম বাঙালি নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন টিউলিপ।বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অন্য প্রার্থীদের মধ্যে লন্ডনের বাকিং আসনে কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে লড়ছেন মিনা সাবেরা রহমান। তাঁর গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায়। বেকেনহাম আসন থেকে লেবার পার্টির হয়ে লড়ছেন ব্যারিস্টার মেরিনা আহমদ। মাত্র ছয় মাস বয়সে মা-বাবার সঙ্গে ব্রিটেনে যান তিনি। তাঁর গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। নর্থ-ইস্ট হ্যাম্পশায়ার থেকে লেবার পার্টির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আমরান হোসাইন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জে। একই দলের হয়ে লন্ডনের নিকটবর্তী ওয়েলউইন অ্যান্ড হাটফিল্ড আসন থেকে লড়ছেন আনোয়ার বাবুল মিয়া। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর গ্রামে তাঁর পৈতৃক বাড়ি।স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় লেবার পার্টির টিকিটে লড়ছেন ফয়ছল চৌধুরী। ২০০৪ সালে তরুণ বয়সেই ব্রিটিশ রানি কর্তৃক ‘এমবিই’ খেতাবে ভূষিত হন। তিনি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বদরদি গ্রামের সন্তান। সিলেটের বালাগঞ্জের আখলাকুল ইসলাম লুটনের রিগেইট অ্যান্ড বেনস্ট্যাড আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। লুটন সাউথ আসনে লিবারেল ডেমোক্র্যাটস (লিবডেম) দলের প্রার্থী হয়েছেন আশুক আহমদ এমবিই। ২০০৯ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ কর্তৃক সম্মানজনক মেম্বার অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (এমবিই) খেতাবে ভূষিত হন তিনি। তাঁর জন্ম সিলেটের বিয়ানীবাজারে। ওয়েলসের আর্ফন আসনে লিবডেমের প্রার্থী হয়েছেন মোহাম্মদ সুলতান। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সন্তান সুলতান তরুণ বয়সে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী সুমন হক এভারডিনশায়ারের বেনফ অ্যান্ড বুখান আসনে লেবার দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকে।ইতিহাস গড়ার আশায় বাংলাদেশিরা : ব্রিটেনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বড় আশায় বুক বেঁধেছেন। সে আশা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজনকে মন্ত্রী হিসেবে পাওয়ার। অবশ্য এ আশা পূরণ হতে হলে লেবার পার্টিকে ক্ষমতায় যেতে হবে। এ সম্ভাবনা জাগিয়েছেন জয়ের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা বর্তমান এমপি ও ছায়ামন্ত্রী (শ্যাডো মিনিস্টার) রুশনারা আলী। তাঁর দল ক্ষমতায় গেলে তিনি মন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন। আর সত্যি যদি তা হয় তাহলে সেটা হবে নতুন ইতিহাস। প্রবাসী বাংলাদেশিরা সে স্বপ্নে বিভোর।রুশনারা আলী বলেন, ‘এখন আমার সামনে কেবল নির্বাচন। দল ক্ষমতায় গেলে দলের নেতৃত্ব যদি যোগ্য মনে করে তবেই প্রশ্ন মন্ত্রিত্বের। এ ব্যাপারে এখন কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’ এমপি হতে পারলে টিউলিপও চমক দেখাতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায় মাল্টিকেয়ার