বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির নাম উইলিয়াম হেনরি গেটস বা বিল গেটস। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান, প্রাক্তন প্রধান সফটওয়্যার নির্মাতা এবং প্রাক্তন সিইও। একাধারে ১৩ বছর যাবৎ তিনি পৃথিবীর সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি ছিলেন।
এরপরও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জরিপ প্রতিষ্ঠানের হিসাবে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর স্থান দখল করেছেন। সবশেষ এ বছরের ২ মার্চের বিশ্বের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ফোবর্সের হিসাবে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর খেতাব জিতেছেন বিল গেটস। ফোবর্সের হিসাব মতে, বিল গেটসেরম মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৭৯.২ বিলিয়ন ডলার।
বিল গেইটস ২৮ অক্টোবর ১৯৫৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বিল গেটস ওয়াশিংটনের সিয়াটলে উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম উইলিয়াম হেনরি গেটস সিনিয়র, যিনি একজন প্রসিদ্ধ আইনজীবী ছিলেন। মায়ের নাম মেরি ম্যাক্সয়েল গেটস। গেটসের ক্রিস্টিয়েন নামে এক বড় বোন আর লিব্বি নামের এক ছোট বোন আছে।
বিল গেটস ১৯৯৪ সালের ১লা জানুয়ারি মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চকে বিয়ে করেন। ব্যাক্তিগত জীবন বলতে স্ত্রী মেলিন্ডা ও তিন সন্তান। দুই মেয়ে জেনিফার ক্যাথারিন ও ফিবি অ্যাডেল এবং একমাত্র ছেলে ররি জন ১।
শৈশবে বাবা-মা চেয়েছিলেন বিল গেটসকে আইনজীবী বানাতে। ১৩ বছর বয়সে তিনি লেকসাইড স্কুলে ভর্তি হন। এখান থেকে ১৯৭৩ সালে পাশ করেন। তিনি স্যাট পরীক্ষায় ১৬০০ এর মধ্যে ১৫৯০ পান এবং ১৯৭৩ এর শরতে হার্ভার্ড কলেজে ভর্তি হন।
যদিও বিলের বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে উকিল হবে। তবে তার বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণে তেমন আগ্রহী হতে দেখা গেল না। অবশ্য তেমন কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছিল না যে, সামনে কীভাবে নিজেকে যোগ্য করবেন। তবে তার মন ওই কম্পিউটারের পিছনেই পড়ে থাকত। শেষে তার স্কুলের সেই বন্ধু পল অ্যাল্যান তাকে যেতে বললেন হাভার্ডে। মূলত বন্ধুর ডাকেই সাড়া দিয়ে হাভার্ডে যোগ দিলেন পল।
এর মাঝে মাইক্রো ইনস্ট্রুমেন্টেশন অ্যান্ড টেলিমেট্রি সিস্টেম (এমআইটিএস) তাদের এমআইটিএস অ্যালটার ৮৮০০ বের করে। এটি একটি মাইক্রোকম্পিউটার বিশেষ। বের হওয়ার পর গেটস এমআইটিএসের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন।
তিনি তাদের জানান যে, তাদের এমআইটিএস ৮৮০০-তে তিনি নতুন কিছু প্রোগ্রাম যুক্ত করতে চান। এমআইটিসের প্রেসিডেন্ট বেশ আগ্রহ দেখালেন। তিনি বিলের কাছে ডেমো চেয়ে বসলেন। বিল ব্যাসিক নামের একটি ডেমো তৈরি করেন। এমআইটিএস তাদের কম্পিউটারে ডেমো ব্যাবহার করে বিস্ময়কর ফলাফল পায়। পরে এই প্রোগ্রাম নিয়ে পরবর্তী সময়ে এমআইটিএস তাদের নতুন এডিশন ছাড়ে।
এর পরে পল এমআইটিএসে চলে যান। পলকে সাহায্য করার জন্য হাভার্ড থেকে ছুটি নেন বিল গেটস। তিনি পলের সঙ্গে পার্টনারশিপে একটি অফিস খোলেন। নিউ মেক্সিকোর আলবুকারকিউ নামের এক এলাকায় প্রথম অফিস খুলেন। ১৯৭৬ সালের ২৬ নভেম্বরে মেক্সিকোর বাণিজ্য সচিবের অনুমতিক্রমে এমআইটিসের এর আওতায় একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। এটিই ছিল মাইক্রোসফটের প্রথম অফিস।
পরে ১৯৭৭ সালে এমআইটিএস থেকে মাইক্রোসফট সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠান সফটওয়ার ডেভেলপমেন্টের ওপর কাজ করতে থাকে। বিল ভাবলেন তার প্রতিষ্ঠানকে নিজ দেশে নিয়ে যেতে হবে। তিনি নিউ মেক্সিকো থেকে মাইক্রোসফটকে ওয়াশিংটন শহরের বেলেভ্যু শহরে নিয়ে আসেন। এখানে এসে কোম্পানির জন্য লোন খুঁজতে শুরু করলেন। নতুন কোম্পানি বলে কেউই লোন দিতে রাজি নয়। অনেক চেষ্টা করে কাছের এক ব্যাংক থেকে লোন পান তিনি।
১৯৮০ সালে আইবিএম একক ব্যবহারের জন্য একটি কম্পিউটার তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। অ্যাকরন ছদ্মনামে একটি গোপন প্রজেক্ট শুরু করে। এই কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম তৈরির জন্য মাইক্রোসফটকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপরে পিসি-ডস নামক একটি অপারেটিং সিস্টেম আইবিএমকে দেওয়া হয়। আইবিএম এটি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এখানে একটা বিষয় হলো যে, পিসি-ডস অপারেটিং সিস্টেমটি কিন্তু সম্পূর্ণভাবে মাইক্রোসফটের দ্বারা তৈরি না। বিল গেটস ওয়াশিংটন শহরের সিয়াটল শহরের ছোট্ট একটি হার্ডওয়ার দোকান থেকে কিউডি-ডস (কুইক অ্যান্ড ডার্টি ডস) নামের একটি অপারেটিং সিস্টেম কিনে নেন। এটিকেই আইবিএমের মাইক্রোপ্রোসেসর অনুযায়ী পরিবর্তন করে পিসি-ডস করা হয়।
১৯৮৫ সালে বিল গেটসের স্বপ্ন পূরণের বছর। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন নিজেদের তৈরি একটা অপারেটিং সিস্টেম বাজারে ছাড়বেন। ২০ নভেম্বর মাইক্রোসফট প্রকাশ করলো তাদের প্রথম অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ১। ১৯৯২ সালের দিকে বিল গেইটস আইবিএমের আওতা থেকে মুক্ত হলেন। অর্থাৎ তিনি সম্পূর্ণ আলাদাভাবে মাইক্রোসফট উইন্ডোজের এডিশনগুলো ছাড়তে লাগলেন। মাইক্রোসফটের বাজার সমৃদ্ধ হতে লাগল। আস্তে আস্তে মাইক্রোসফট বাজারে বেশ ভালভাবে আসন নিয়ে নিল। আর বিল গেটস হয়ে উঠতে লাগলেও শত শত কোটি টাকার মালিক।
একের পর এক মাইক্রোসফটের নতুন নতুন আবিষ্কার বাজারে আসল। আর ব্যাপকভাবে সাড়া পেল মাইক্রোসফট।
১৯৯০ সালে উইন্ডোজ ৩, ১৯৯৫ সালে উইন্ডোজ ৯৫, ১৯৯
Leave a Reply