হাজীগঞ্জের বাকিলায় রেল দুর্ঘটনায় বেশ ক�টি তেলের বগি লাইনচ্যুত হওয়ার প্রায় ৪০ ঘণ্টা অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু চালু হচ্ছে না চাঁদপুর-লাকসাম রেল যোগাযোগ। রেলের উদ্ধার কর্মীরা বিরতিহীনভাবে কাজ করলেও ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে লাইন মেরামত ও বগি লাইনে তুলে আনতে অনেক সময় চলে যাচ্ছে। এদিকে এ ঘটনায় রেলের ঊর্ধ্বতন চার কর্মকর্তার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর এই সড়কের রি-মডেলিং কাজ ধীরগতিতে চলার কারণে লাইনের পুরাতন অংশে দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার বিকেলে চট্টগাম থেকে ২৫টি তেল বহনকারী বগি নিয়ে ট্রেন চাঁদপুরে আসার পথে বাকিলা এলাকায় ১০টি বগি লাইনচ্যুত হয়।
বাকিলার স্থানীয়রা জানান, বুধবার রাত থেকেই দুর্ঘটনা কবলিত রেলের বগি উদ্ধারে কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ। পরের দিন গতকাল বৃহস্পতিবার সারাদিন ধরে ৭টি বগি লাইনে তুলে আনা হয় এবং এগুলো হাজীগঞ্জ রেল স্টেশন এলাকায় নিয়ে রাখা হয়। বিকেল আনুমানিক ৩টার দিকে উদ্ধারকারী রেলের ক্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এর পরেই শুরু হয় সবচে� বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বগি উদ্ধার কাজ। ক্রেনের মাধ্যমে একটি বগি লাইনে তুলে আনা সম্ভব হলেও তা লাইনে বসানো নিয়ে ব্যাপক সমস্যায় পড়েন কর্মকর্তারা। আর এই বগিটি হাজীগঞ্জে নিতে রাত হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত বাকি দুটি বগির উদ্ধার কাজ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টার মধ্যে শুরু হতে দেখা যায়নি। আর তা থেকে ধারণা করা হচ্ছে এই সড়কে যোগাযোগ স্বাভাবিক হতে শুক্রবার পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
চট্টগ্রাম রেলের পূর্বাঞ্চলীয় অতিরিক্ত চীপ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট একেএম মাসুদুল আরেফিন চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, এই দুর্ঘটনায় তিনি নিজেসহ ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার কারণ বলা না গেলেও নির্দিষ্ট সময়ে রিপোর্ট দেবেন বলে তিনি জানান। অপর এক প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের লোকজন কাজ করে যাচ্ছে, আশা করছি রাতেই কাজ শেষ করা হবে।
রেলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) এবিএম কামরুজ্জামান জানান, আমরা ৭টি লোড বগিকে হাইড্রোলিকের মাধ্যমে লাইনে তুলে এনেছি। বাকি ৩টি বগিকে ক্রেনের মাধ্যমে তুলতে হবে। এর মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত বগিকে আগে তুলতে হবে। পড়ে যাওয়া বগিটির বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া যায়নি।
আসাম-বাংলার গেটওয়ে খ্যাত নদীবন্দর চাঁদপুরকে বাণিজ্যিক গুরুত্ব দিয়ে ব্রিটিশ আমলে তৈরি হয় চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথ। অতি পুরানো এ লাইনের রেলগুলো ক্ষয়ে গেছে, রেললাইন থেকে সরে গেছে মাটি ও পাথর, ভাঙ্গা স্লিপারের উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। যদিও চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের গতি ঘণ্টায় ৫২ কিলোমিটার। আর এ কারণে প্রায় সময় রেলের ইঞ্জিন, কখনো আবার বগি লাইনচ্যুত হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দিনের পর দিন এ রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে থাকে।
চাঁদপুর-লাকসাম রেল সড়কের রি-মডেলিং কাজ শুরু হয় গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। ১শ� ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে রি-মডেলিং কাজ ধীরগতিতে চলার কারণে এ সড়কের পুরাতন লাইনে ঘটছে অহরহ দুর্ঘটনা। এর মধ্যে মৈশাদী ও শাহতলী এলাকায় রেলের অনেক অংশে পাথর না থাকার কারণে আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সড়কের পুরাতন অংশটি। অনেকে ধারণা করছেন রেল সড়কের রি-মডেলিং কাজ শেষ হলে দুর্ঘটনা কমে যাবে। আর কাজটি যেনো দ্রুত শেষ হয় যে আশা করছেন রেলে চলাচলকারী অনেক যাত্রী সাধারণ।
Leave a Reply