গতকাল বুধবার বিকেলে চাঁদপুর-লাকসাম রেল সড়কের হাজীগঞ্জের বাকিলা এলাকায় জ্বালানি তেলবাহী ট্রেনের বগি (অয়েল ট্যাংকার) লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে করে চাঁদপুর-লাকসাম-চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সাথে চাঁদপুরের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ট্রেনটি চট্টগ্রাম বন্দর জেটি থেকে ২৫টি তেলের বগি নিয়ে চাঁদপুরে আসার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয়। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত বগি থেকে স্থানীয়রা কয়েকশ� লিটার তেল নিয়ে গেছে। ওই জায়গায় রেল লাইনের একটি অংশ ভাঙ্গা থাকার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানায়। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল নাগাদ উদ্ধার কাজ শেষ হওয়ার পরেই ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে রেল সূত্রে জানা গেছে। এ কারণে গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর মেঘনা লাকসাম পর্যন্ত আসে।
জানা যায়, এদিন বিকেল পৌনে ৫টার দিকে হাজীগঞ্জ রেল স্টেশন থেকে ২৫টি জ্বালানি তেলবাহী বগি ও একটি গার্ড ট্রেন নিয়ে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে ট্রেনটি। বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে বাকিলা এলাকায় আসামাত্র বিকট শব্দে একটি বগি উল্টে পড়ে। এ সময় একসাথে ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় বেশ কিছু রেল ও স্লিপার ভেঙ্গে যায়। দুর্ঘটনার পর পর ট্রেনে থাকা ট্রেন চালক ও গার্ড মুঠোফোনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান।
দুর্ঘটনার সাথে সাথে উল্টে যাওয়া বগি থেকে তেল পড়া শুরু করে। পরে স্থানীয়রা পাতিল, বালতি, গামলাসহ বিভিন্ন পাত্রে করে তেল নেয়া শুরু করে। এক পর্যায়ে রেলের লোকেরা বগির মুখ ভালোভাবে সিলগালা করে দিলে তেল পড়া বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয়রা ধারণা করছে বগি থেকে কয়েকশ� লিটার তেল পড়ে গেছে।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চাঁদপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রোকনুজ্জামান বাঁধন জানান, বাড়ি ফেরার রেল সড়কে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি ট্রেনের বগিটি রেল সড়কের ডান পাশের কৃষি জমিতে হেলে পড়ে গেছে।
দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেন চালক মহিন উদ্দিন চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, আমাদের নির্দেশনা ছিলো এই সড়কে ১০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালাতে হবে। সড়কটির কাজ চলার কারণে আমি আরো কম গতিতে গাড়িটি চালিয়ে আসার পথে হঠাৎ করে পেছনে শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি একটি বগি পড়ে যাচ্ছে। সাথে সাথে ট্রেনটি থামিয়ে দেই। যার কারণে বেশ ক�টি বগি লাইনচ্যুত হলেও উল্টে পড়েনি।
ট্রেনের সহকারী চালক ফরিদুজ্জামান বলেন, রেল সড়কটি পুরাতন ও অনেক স্লিপারে নাটবল্টু ছিলো না। সবচে� বড় ব্যাপার হলো একটি রেলের নিচের অংশ পূর্বে ভাঙ্গা ছিলো। লোডগাড়ি ভাঙ্গা অংশে উঠার পরেই ঐ অংশের উপরের রেলটি ছিড়ে গিয়ে গাড়িটি দুর্ঘটনার শিকার হয়।
ট্রেনে কর্মরত নিরপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্য মেহেদী জানান, আমি ছিলাম সকল বগির পেছনে গার্ড ব্রেকে। বিকট শব্দ শুনে সামনে তাকিয়ে দেখি একটি বগি কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছে। তারপরেই চালক গাড়িটি থামিয়ে দেন।
চাঁদপুর বড় স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার সিরাজুল ইসলাম মুঠোফোনে রাতে চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, রিলিফ ট্রেন লাকসাম থেকে রওনা হয়েছে। বেশ কিছু বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় লাইন মেরামত করতে অনেক সময় লাগবে। অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ট্রেন চলাচল স্বাভবিক হতে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত লাগতে পারে। তিনি আরো জানান, আন্তঃনগর মেঘনা আজ (গতকাল) রাতে লাকসাম পর্যন্ত আসবে।
এদিকে লাইনচ্যুত হওয়া ট্রেনটির উদ্ধার কাজের সময় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা মাথায় রেখে হাজীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে প্রস্তুত রয়েছে। কারণ, লাইনচ্যুত হওয়া সবগুলি বগিহীন জ্বালানি তেলবাহী।
Leave a Reply